Saturday, December 5, 2009

তিন কন্যা-পর্ব ১

চরিত্র-তালিকা

১) বিপিন চন্দ্র
২) প্রিস্টিন পাল (F)
৩) রঙ্গলাল

৪) সুনয়না সেন (F)

৫) লিমারিক বসু (F)

৬) কাপালিক শ্রী শ্রী তর্কালঙ্কার আচার্য্য

৭) এক্সট্রা:- সিপিএম ক্যডার, ঘেটো ক্রাউড, মশা

৮) ভেস্ট এপিয়ারেন্স:- দুর্যোধন

স্থান: ডিসি, নিঊ জার্সি, কলিকাতা।




পূর্বকথা


কলেজে থাকতে এই স্বপ্নটি প্রায়ই দেখত সে।


একটি বিস্তীর্ণ প্রান্তর। সেখনে অনেক অনেক কাগজ। কাগজের চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে বিপিন। প্রথমে ডলার ভেবে হাতে নিয়ে উড়িয়ে দেখেছিল, কিন্তু না। সব কটা কাগজে একটাই ছাপ মারা 'acrobat reader 9' । সামনের বেদীতে বসে ওটা, ওটা কে? ক্লাসমেট কিংশুক না? কিন্তু ও কি, ওর হাতে গদা কেন? থাইয়ে ব্যান্ডেজই বা কিসের? ক্রমাগত পিং পিং ধ্বনি হয়েই চলেছে। পি ডি- এফ সমুদ্রে ডুবতে ডুবতে বিপিন দেখল প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু কাঠের চেয়ারে ল্যাপটপ বসানো। সেখানে অবিরত চ্যাট-এর মেসেজ আসছে। কিন্তু আজ কোনটারই উত্তর দিতে পারবে না। অসহায় ভাবে একটা হাত বাড়িয়ে দিল বন্ধুর দিকে বিপিন।
'আমার, আমার কি হইবে?'


দুর্যোধন-রূপী বন্ধু অঙ্গুলি নির্দেশ করিল বেদীর নিচের দিকে। তথায় এক বৃহদাকার অজগর সর্প আপনি-আপ'কে গিলিয়া খাইতেছে। বিপিন এর মনে পড়িল এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় এই বিষয়ের উপর সে অনেক আঁক কষিয়াছে। 'কনান্ড্রাম' শব্দ টি তখন থেকেই জানা । কিন্তু ইহার সাথে তাহার জীবনের কি সম্পর্ক?


সভয়ে প্রশ্ন করিল 'মিন করিতেছেন, কি আমার অতীত আমাকে গ্রাস করিবে? তাহলে কি ইহাই মানিয়া লইব মানুষ ডেস্টিনির শিকার, সে তাহার ললাটলিখন এড়াইতে পারে না, কিন্তু মিলের পজিটিভ লিবার্টি গ্রন্থে আছে, সাবজেক্টিভ উইল-পাওয়ার...'


- 'ওসব ভাট ওর্কুটে দিস। আই হ্যাভ ওনলি ট্যু ওয়ার্ডস ফর ইউ। এন্ড দ্যট ট্যু ইন স্যনস্কৃট। আত্মলিঙ্গম পোঁদেপুরম!'


এবার বিপিন রীতিমত সন্ত্রস্ত। তাহার প্যানিক-স্ট্রিকেন ও ঊর্বর মস্তিষ্কে গ্রীক, রোমান, সেক্সপীয়ার ও পুরানের ট্র্যাজিক নায়কদের বায়ো-ডাটাবেসে এক রান্ডম সার্চ এলগোরিথম লাগাইয়া দিল।

- 'আমি কি পিতাকে হত্যা করিয়া মাতাকে বিবাহ করিব? আমি কি বস কে খুন করিয়া, তাহার পদ ছিনিয়া লইব? আমি কি...'

- ' পিতা দূরস্থান, এই ইহজন্মে একটি সময় আসিবে যখন মশক হত্যা করিতে তোমার হাত কাপিবে। তোমার মৃত্যুর কারণ হইবে তোমার অগাধ লিপ্সা ও ততোধিক গবেটপনা।
হ্যা, আর একটি কথা, তোমার এই বিবিধসম্ভাবনাখচিত বর্ণময় জীবনের যাত্রাপথে, এক পুরুষের সহিত সাক্ষাৎ হইবে। যাহার চিন-এ দুটি পক্ক কেশ-রাশি পাইবে। এমনিতে বোঝা কঠিন, নিকটে গেলে দেখিতে পাইবে। উহার হইতে সেফ ডিস্টেন্স মেনটেন করিও। নচেত পস্তাইবে।'

ঘাম দিয়ে ঘুম ভাঙত বিপিনের।


পোস্টমাস্টার

(১)

'হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল'
----প্রাচীন প্রবাদ


২০০৯। ওয়াশিংটন ডিসি। স্থান: ন্যাশনাল জুওলজিকাল পার্ক। ইউনিভার্সিটি ওফ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান ডিয়েগো'র ইভোল্যুশনরি বায়োলজির হেড ওফ দ্য ডিপার্টমেন্ট, প্রফেসর বিপিন চন্দ্র তার এক স্পেশাল সায়েন্টিফিক টিম লইয়া এক মাস হইল ডিসি আসিয়াছেন। কিছু কাজ, কিছু ভ্রমণে দিন গুলো ভালই কাটিয়াছে । অদ্য শেষ দিবস।


প্রত্যেক রবিবার বিপিন এখানে টহল দিতে আসেন। উদ্দেশ্য, হাওয়া-সেবন ও ইতি-উতি ফটোগ্রাফি। পেশার কারনেই পশুপক্ষীর জগত উহাকে প্রবল ভাবে টানে। আজ বিশ্ব পশু দিবস উপলক্ষ্যে বেশ কিছু ট্যুরিস্টও জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এক স্টুডেন্ট বৈজ্ঞানিক টিম পার্কে ভিড় করিয়াছে। হাতি গন্ডার জিরাফ ইত্যদির ছবি তুলিতেছে। বিপিন টিম'টির সাথে ভিড়িয়া গেল।



এখন উহারা একটি বৃহদাকার হস্তীর সম্মুখে। কঙ্গো হইতে ইম্পোর্টেড এই হস্তীটির অস্বাভাবিক মেমরি হেতু কিছু স্পেশাল বিহেভরিয়াল প্রপার্টি আছে, যাহা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ ব্যবহৃত হইতে পারে। একটি গাইড তাহা ব্যাখ্যা করিতে শুরু করিল। এই অদ্ভুত প্রাণিটির দর্শনলোভে বেশ কিছু ট্যুরিস্টও পিছু পিছু আসিল।


ঠিক এই সময়ে বিপিন অদ্ভুত ব্যাপারটি খেয়াল করিল। একজন, হ্যাঁ শুধু একজন হাতিটিকে দেখিতেছে না। ঐ দিকে উহার কোন ভ্রক্ষেপই নাই। বরং আধা-উদ্ভ্রান্ত আধ-প্যানিকি হইয়া হাতির পদতলে, ঘাসের ঊপর কিছু একটা খুঁজিবার প্রয়াস করিতেছে। বিপিন-এর মনে পড়িয়া গেল, আগের সপ্তাহে এই মহোদয়াই তুরস্ক হইতে ইম্পোর্টেড ঘোড়ার লেজ-প্রান্তে বা তাহার আরো নীচে কি এক গভীর অনুসন্ধান চালাইতেছিল, রূপবান অশ্বটিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করিয়া।


এইবার আরো অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটিল। হাতিটি অনেক বিবেচনা করিয়া, অত্যন্ত শ্লথ গতিতে, একটি কেয়ার্ফুল স্টেপ লইবার মনস্থির করিল। এবং একটি পা অগ্রসর হইল। সেই মুহূর্তেই ট্যুরিস্ট টিমকে পিলে চমকইয়া দিয়া আমাদের এই অনামিকা মহোদয়া এক লম্ফ দিয়া হস্তীর পদতলে ঝাঁপাইয়া পড়িল ও শ্রীলক্ষ্মী যেমন সমুদ্রগহ্বর হইতে করপুটে সযত্নে অমৃত ভান্ডার উদ্ধার করিয়া সার্ফেসে ঊঠিয়া আসেন, অনুরুপ বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ ও এলিগেন্স সহ কিছু একটা তুলিয়া আনিল... তাহার হাত দ্বিধাথরোথরো, তাহার চোখে আধো সন্ত্রাস ও আধো যুদ্ধজয়ের উল্লাস, কন্ঠে কৈশোরের অস্থিরতা। বিপিন বাবুর উদ্দেশ্যে, না স্বগতোক্তি ঠিক বুঝা গেল না, কিন্তু কন্ঠ-সুধার অনিবর্চনীয় কোয়লিটি তে যাহা খাড়া হইয়া উঠিল, তাহা হইল বিপিন বাবুর কর্ণ।

-'বাব্বা আর একটু হলেই পিষে যাচ্ছিল'
-'কি? '
অনামিকা হাত খুলিল। বিপিন দেখিল একটি ক্ষুদ্র মশা। ৭০-৮০র দশকে উত্তর কলকাতায় বহু লোডশেডিং-ঘন যামিনী যাপনকারী বিপিন চন্দ্রের কন্ডিশনাল রিফ্লেক্স তাহাকে বাধ্য করিল হত্যাকারির হস্ত উদ্যত করিতে। কিন্তু আঘাত আসিল না। বায়ুপথেই তাহা থামিয়া গেল, বিপিন দেখিল তাহার জামার আস্তিনে অনামিকার হাত।

-'এ কি করছেন?' অনামিকার চোখে হরিণশিশু-রেস্কু-কালে-শকুন্তলা'র তিরস্কার ও ভয়।
-'না, এটা তো মানে জাস্ট একটা মশা'।
-'জাস্ট মশা!'
-'মানে এ তো সামান্য....'
-'সামান্য!'
কিছুক্ষন দুজনেই চুপ। বিপিনেরো হাত কাঁপিতেছে। স্বপ্নে বন্ধুর ভবিষ্যবাণী স্মরণে এল।
-'আপনাকে আমি আগেও দেখেছি।'
-'হ্যা আমি প্রত্যেক রোব্বার আসি। এদের জন্যই আসি।'
-'আমেজিং! আপনি হাতি ঘোড়া না দেখে মশা বাঁচাতে আসেন?'
-'মশা দের নাহলে দেখবে কে? হাতি ঘোড়া সবল প্রানী , তবু এদের যত্নআত্তিরে কত লোক, কত আয়োজন , বেচারী মশাদের কে আছে বলুন। এই
জ়ালিম দুনিয়ায়, হাতি ঘোড়া গন্ডার বাঘ সিংহ মানুষ, মশাদের প্রতিনিয়ত পিষে যাছে, ওরা দুর্বল বলেই না। শুধু এখানে নয়, ভারতে লাটিন আমেরিকায়, মধ্যপ্রাচ্যে। আমি লিঙ্ক দিয়ে দেখাতে পারি দিনে কত মশা মার খাচ্ছে, সারা পৃথিবী জুড়ে।'

-'কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক মানে বিবর্তন । মানে 'সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট' মানে এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম'
-'সবি বুঝলাম', তারপরেই সীমাবদ্ধ সিনেমার নায়িকা টুটুল-এর মত একটি অ্যাকিউট এঙ্গেলে ঘাড় বেকিয়ে চোখ বড় বড় করে আবার আবার সেই খনিকটা নিজেকে খানিকটা অন্যকে বলার কনফিউশন তৈরি করে এবং সেই একি কন্ঠ-সুধা ঢেলে 'কিন্তু এটা ভাল না খারাপ ?'

এর উত্তর কি বিপিন বাবুর জানা ছিল ন। এথিক্সে যার বিশাল পড়াশোনার ব্যাপ্তি। হেগেলিয়ন মরালিটি হইতে নিয়েৎসের অ্যামরাল লজিক যাহার নখদর্পণে। কিন্তু সেই মুহুর্তে বিপিন বাবু উত্তর দিতে একপ্রকার অক্ষমতা বোধ করিলেন।

কারণ ইতিমধ্যে, ঐ গ্রীবা টার্নিং এর যাদুময় ম্যন্যুভারেই হোক, বা ঐ পূর্বোক্ত প্রশ্নের ডিসআর্মিং সরলতায়, বিপিনের মনে অপূর্ব ভাবের উদয় হইয়াছে। কি অপরূপ তার মুখশ্রী। যেন কৃষ্ণমেঘচ্ছটামুক্ত কেশভারে বহিয়া আনিয়াছে এক অনাগত ভ্যালেন্টাইন সন্ধ্যার গাঢ় অনুকম্পা। কৃশ বাহুলতা যেন এক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গোলাপের উন্মুখ টেন্ডার শাখা। উহার হাস্যে জলপ্রপাতের সঙ্গীত-ধ্বনি। উহার দেহভঙ্গিমায়, চলা ফেরায়, ইথিরিয়্যাল লঘুত্ব।

উহার নয়ন যুগল - পাঠক, তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এই রত্নদ্বয়েই লুক্কায়িত এই আখ্যানের থিম ও বিপিন চন্দ্রের নেমেসিস। কন্যার নেত্রে এ কি বিষণ্ণতার ছায়া। এই বিষাদ-গম্ভীরতার দুর্নিবার আকর্ষণ বিপিন না পারিল এড়াইতে না পারিল সহিতে।


ইত্যবসরে অনামিকা তাহর নাম দিয়াছে- প্রিস্টিন পাল। সুন্দর নাম। এমন নাম শুধু তাহারি হইতে পারে। মশাদের সংগ্রাম নিয়ে আরো অনেক অনেক জ্বালাময়ী সংবাদ উহার শ্রীমুখ হইতে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত হইতেছিল, কিন্ত সহসা সে উপলব্ধি করিল, শ্রোতা একপ্রকার আনমনা হইয়া গিয়াছে। এনোফেলেস সম আনপ্রেডিক্টেবল ক্ষিপ্রতায়, প্রিস্টিন তাহার হস্তে একটি চিমটি কাটিল। বিপিন মুখ তুলিল। ও বিস্ময়ের সাথে অবলোকন করিল, সেই করুণাঘন আঁখিপ্রান্তে, ধিকিধিকি অগ্নিকণা। পাঠক, বিপিনের মত তুমিও ইহার আকস্মিক তাপ অনুভব কর, বক্ষে, মস্তিষ্কে।


-'আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, সি পি এম আমাদের দেশে রাজত্ব চালাইতেছে।'

বিপিন ঢোক গিলিল। এই তিনটি অক্ষর স্মৃতিমন্দিরে এ যাবৎকাল, অসহনীয় অপমানবোধের সমার্থক হইয়া রহিয়া গেছে। একে একে তাহার মনে পড়িতে লগিল, বাড়ির তাকে সযত্নে সাজানো, ক্যাপিটালের চার খন্ড, পার্টি-নিবেদিত-প্রাণ পিতৃদেবের ইলেক্শান ডিউটি, কৈশোরে ভলান্টিয়ার হওয়া, ও সবশেষে প্রাদেশিক কন্ফারেন্সে পোস্টার লেখাকালীন 'কম্যুনিজম' বানানে চারটি 'এম' পড়ায়, এক দল ইন্সেন্সিটিভ ক্যাডার কর্তৃক মুহুর্মুহু পদাঘাত।


প্রিস্টিনের স্বরে পুনরায় অনুকম্পা। 'কি হল, আবার এরকম ম্যলেরিয়া রোগীর মত বিহেভ করছেন কেন?'
বিপিন কিঞ্চিত শিহরিয়া উঠিয়াছিল, কোনরকমে সামলাইয়া নিয়া বলিল 'হ্যাঁ, সি-পি-এম'।
- 'সিপি এম দেশকে আর মশার বাসযোগ্য রাখিবে না। উহাদের পলিসি হইল মশাদের মারিয়া হাতিদের খোরাক দেওয়া। আমরা সিপিএম কে গদিচ্যুত করিব। যবনদিগকে, থুড়ি হার্মাদদিগকে পরাস্ত করিব। অস্ত্রবলে।'
- 'সি পি এম আমার পাছায় লাঠি মারিয়াছিল। এখনো দগদগে ঘা রহিয়াছে। আপনাকে দেখাইতে পারি।'
প্রিস্টিন এর ভ্রু কুঞ্চিত হইল। ও চন্দন সম দেহ হইতে সূক্ষ্ণ রি-রি নির্গত হইল।
- 'তুমি কি নিজেকে মাইকেল ডগলাস ভাব, যে কোন নারী তোমার পশ্চাদ্দেশ দেখিতে উৎসাহিত হইবে?'
- 'আমি আপনাদের সাথে আছি। বেটাদের ওপর আমার অনেক দিনের রাগ।'
- 'তবে এখনো লড়াই-এর সময় আসে নাই। প্রথমে ধন-সংগ্রহ।'
- 'কিন্ত এত ধন লইয়া তুমি কি করিবেক?'
- 'এই একি প্রশ্ন যদি আমার পূর্বজন্মে ভবানী পাঠক না করিয়া থাকিতেন, আমি তোমার বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল ব্যাটারির কেস আনিতাম। ধন বলিতে আমি রিসোর্স মিন করিতেছি। ঐ দূরে দেখা যায় পোটোম্যাক নদী। ওখানে আমাদের বজরা বাঁধা আছে। রবিবার রবিবার যে মশা ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীদের রেস্কু করি, তাদের স্যাংচুয়ারি ঐ বজরা। আর আমাদিগের ওপারেশন বেস-ও বটে । বজরার ডেকে যে যুবক দূরবীন চোখে লইয়া দন্ডায়মান, উহার নাম রঙ্গলাল। রঙ্গলালের নানা ডিউটির মধ্যে একটি হল, দূরবীন লইয়া শত্রুপক্ষের গতিবিধি গোচর করা। আইস, আমরা বজরা অভিমুখে যাই!'





(২)

"And God said unto Noah, The end of all flesh is come before me; for the earth is filled with violence through them; and, behold, I will destroy them with the earth. But with thee will I establish my covenant; and thou shalt come into the ark."
-- The Holy Bible



সেই সন্ধ্যায় বিপিন বজরায় প্রবেশ করিল। প্রিস্টিন ও বিপিনকে আসিতে দেখিয়া রঙ্গলাল দূরবীন এর দিশা ঘুরাইয়া দিল। এতক্ষণ তাহার দৃষ্টি দূরে নদীতীরে ফ্রাইডে-নাইট-হুল্লোর-মত্তা একটি অর্ধনগ্ন শ্বেতাঙ্গিনী জমায়েত-এর প্রতি নিবদ্ধ ছিল। এই ক্ষুদ্র তথ্যের সাহায্যে আমরা রঙ্গলালের চরিত্রের কিছুটা আন্দাজ পাইলাম। আর তথা হইতে বিপ্লবের প্রস্তুতিরও।


প্রিস্টিন ও রঙ্গলাল বিপিন কে বজরা ঘুরাইয়া দেখাইতে লাগিল। বিপিনের মুগ্ধতার সীমা নাই। বিপিন বুঝিল, প্রিস্টিনএর জীবন-দর্শন হইল 'স্মল ইস বিউটিফুল'।


সেই ভাবেই সে তাহার বজরা সাজাইয়াছে। এক একটি ক্ষুদ্র প্রাণির জন্য এক একটি কক্ষ। কি মায়ার সাথে উহাদের লালন করা হইতেছে।


একটি ঘরের সামনে আসিয়া প্রিস্টিন বলিতেছিল ' কি সুন্দর ছোট্ট প্রজাপতিটা , আহা, জোনাকিদের কি বাহার, ঐ দেখুন ঘাস-ফড়িং। এই সুন্দর সবুজ লেজ-ওয়ালা পোকাটির নাম হল...'


পেছনে একটি পুরুষালী কন্ঠ ফুট কাটিল। 'এছাড়াও আছে, গুবড়ে পোকা, কালীপোকা, মাছি, পঁিপড়ে, শুঁয়োপোকা, মাকড়সা, টিকটিকি,...'


বিপিন ঘুরিয়া দেখিল রঙ্গলাল হাসিমুখে আসিয়া দাড়াইয়াছে।
'অসুন্দর বলিয়া ইহাদের তুচ্ছ করিবেন না। ইহারাও সাব-অল্টার্ন।'
কীট-কক্ষের নিওন আলোয় ভয়-বিস্ময়-মিশ্রিতনেত্রে বিপিন খেয়াল করিল, রঙ্গলালের থুতনিতে দুটি পাকা বাল।


সভাকক্ষে আলোচনা চলিতেছিল।
প্রিস্টিন: 'আমি ইহাই বুঝিতে পারিতেছি না, তুমি কিরূপে আমাদের কাজে আসিতে পার। তুমি না জান চালাইতে একে-৪৭ না পাতিতে পারো মাইন। তোমাকে লইয়া আমরা কি করিব?
- 'আজ্ঞে আমি পোস্টমাস্টার'

এক ঝাঁক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি।

- 'আমি অর্কুট নামক এক সাইটে দিবারাত্র পোস্ট করি । ইহাতে আমি বেশ দক্ষ হইয়া উঠিয়াছি। রোবট সমাজবাদের যুগে আন্তর্জালিক যুদ্ধের প্রাসঙ্গিকতা বাড়িবে। তাত্ত্বিক ভাবে শত্রুদের পরাস্ত করিলেই...'


সমগ্র সভাই কেহই বুঝিল না। একমাত্র রঙ্গলাল বুঝিল। বেশ ঝাঁকিয়ে মাথা নাড়িল। রঙ্গলালকে বুঝাইতে বলা হইলে রঙ্গলাল এমন বুঝাইল, যে বাকিদের মনে হইল পূর্বে সবাই বেটার বুঝিয়াছিল। প্রিস্টিন দেখিলেন ইহা তো মহা সমস্যা। তবে রঙ্গলালের একটি কথা সকলে শুনিল ও অনুধাবন করিল।


পোস্টমাস্টারের মত বিদগ্ধ পন্ডিতপ্রবর ব্যক্তিত্ব মহাকালের সংক্ষিপ্ত ইতিহসে দুর্লভ । ওর অনুপস্থিতিতে যেকোন মহাযজ্ঞই অসম্পূর্ণ থাকিবে।





(৩)
"Anything's possible in Human Nature ...Love. Madness. Hope. Infinite joy."
---The God of Small Things


বজরায়া দিন কাটিতে লগিল। বিপিনের কথা কেহ বোঝে না। একমাত্র রঙ্গলাল বোঝে। আসলে নামের ভেতরে এই 'পোস্ট' শব্দটাই রঙ্গলালকে চুম্বকের মত টানিয়াছিল। প্রথম আলাপেই তাই সহাস্যে বলিয়াছিল 'তুমি পোস্টমাস্টার, আর আমি পোস্টমডার্ন।' রঙ্গলালকেও মন্দ লাগে না বিপিনের। সার্থকনামা। গোমড়ামুখো বজরা-বাসীদের মধ্যে একমাত্র ঐ রঙ্গ করিতে জানে।


আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন দুজনেই যৌবনের মধ্যগগনে। এ হেন দুজন যখন রঙ্গ করিবে ইহাই স্বাভাবিক, রঙ্গ-আলোচনার মূল বিষয় হইবে নারী। কিছুদিন তাহাই ছিল, দুজনে দুজনকে প্রেম ও রতি বিষয়ক নানা প্রকারের আউট-ওফ-দ্য-ওয়ার্ল্ড ফান্ডা দিয়া আলোকিত করিল।


কিন্ত ক্রমশ এই লঘু রঙ্গ-তামাশা ও দোস্তির খেলাচ্ছলে, দর্শন হইতে ন্যায়শাস্ত্র হইতে অপ্টিমাল স্তন-সাইজ আলোচনায়, পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যে মিল পাইল, তাহার পরিণাম হইল সাংঘাতিক । একদিকে রঙ্গলালের সুমধুর কন্ঠ, অন্যদিকে বিপিন চন্দ্রের সুঠাম দেহ আর মেধা । দুজনে দুজনের মধ্যে অনন্তকে পাইল। বিপিনের মধ্যে অপূর্বভাবের ঊদয় হইল। পাঠক বলিবে ইহা টেকনিকলি ইন্কারেক্ট। অপূর্ব ভাব দুবার কি করিয়া উদয় হইতে পারে? আমি বলিব, এই অপূর্ব ভাব অপূর্ব কুমার রায়ের ভাব।


শিশু বয়সে ধান-ক্ষেতের মধ্যে ছুটিয়া গিয়া ট্রেন দর্শন, সদ্য প্রাপ্ত গ্লোবের ভিতর কলিকাতাকে চিনিয়া লইবার প্রবল উৎসাহ, বন্ধুর সাথে টহল দিতে দিতে জীবনের ঊদ্দেশ্য হাসিল করিবার তীব্র বাসনা, নব-বধুর চোখে প্রেম দেখিবার সেই অব্যক্ত মিনতি-- এই সমস্ত অভিজ্ঞতার ভিতরে যে পবিত্র ইনোসেন্স প্রচ্ছন্ন, মন-ধাঁধাঁনো নতুন আনন্দ গ্রহণ কালের সেই সজীব সতেজ অনুভূতি, ইহাকেই আমি এখন, ও পরে এই আখ্যানে (আনলেস আদারওয়াইস মেন্শান্ড), অপূর্বভাব বলিব। মূঢ় পাঠক, তুমি ব্রোক্ব্যাক মাঊন্টেন দেখিয়াছ? দেখিলে, দুই প্রেমিকের মিলনকালে ব্যকগ্রাঊন্ডে গীটারের ট্যাঙ্গ-টি মন দিয় শুনিয়াছ? শুনিয়া থকিলে কিছুটা বুঝিতে পারিবে বজরার ডেকে দেখা হইলে দুজনের হৃদয়তন্ত্রী কিরূপ অনন্যসুন্দর হারমনি তে বাজিয়া উঠিত।


সে যাহা হউক, শুক্লা পঞ্চমীর রাতে, রঙ্গলাল প্রস্তাব দিল, দুজনে দুজনার দৈহিক ব্যবধান ঘুচাইয়া দিবে। বিপিন বলিল, ভাবিবে।
ভাবিতে বসিয়া বিপিন পড়িল সংকটে । প্রথম দর্শনেই সে প্রিস্টিনকে হৃদয় দিয়া ফেলিয়াছিল। সেই প্রেম প্রকাশ করিবার আগেই রঙ্গলাল জীবনে আসিল। এখন সে ত্রিকোণ এর একটি ভারটেক্স। যখন সে প্রিস্টিনের কথা ভাবে তাহার রোমাঞ্চ হয়, আশা জাগে, আনন্দ হয়, কিন্ত রঙ্গলালের কথা ভাবিলে এগুলোর সাথে সাথে আর একটি অনুভূতি দানা বাধে- তাহা হইল ভয়। কিছুতেই সে নিজেকে বুঝইতে পারে না, এ সম্পর্ক অস্বাভাবিক নয়। অহর্নিশি এক অসোয়াস্তিবোধ তাহকে বৃশ্চিকের ন্যায় দংশিতে থাকে। জ্ঞানের আলোকেই টুটিবে অন্ধকার- এই আশায় বুক বাধিয়া এক সুপ্রভাতে 'সমকামিতা' কি-ওয়ার্ড দিয়া বিপিন নেট সার্চ করিতে বসিল।





(৪)
"Something touched me deep inside/The day the music died."
--- The American Pie



অন্তর্জালের অপার মহিমা। বিপিন অসংখ্য লিঙ্ক পাইল, যাহার অধিকাংশই গোড়া খ্রীস্টান ওয়েবসাইট হইতে সংগৃহীত । বিপিনের আনন্দ ধরে না। ইহাকেই বোধহয় 'পাইয়াছি, পাইয়াছি', মুহূর্ত বলে। এধার ওধার হইতে এটা ওটা পড়ে বিপিন উপলব্ধি করিল চিন্তাকে মার্শাল করিবার সহজতম পথ হল, এই অগাধ জ্ঞানসমুদ্রে ফার্দার না অবগাহন করিয়া, যাহা মাথায় আসছে, তাহাই লিখিয়া ফেলা। পরম উদ্যমে বিপিন লিখিতে বসিল। আর লেখা না শেষ হইলে সে রঙ্গলাল নিয়ে কোন সঠিক সিদ্ধান্তেও আসিতে পরিবে না। দূত দিয়া বার্তা পাঠাইল যে শুক্লাপঞ্চমীর অ্যাপো সে রাখিতে পারিবে না। রঙ্গলাল দূতের বার্তা পড়িল। শুষ্ক হাসিল । মুখে কিছু কহিল না। চাপা স্বভাব তাহার বরাবরি, তাছাড়া, এর পূর্বে বহু বহু মামণি এইরূপ বার্তা পাঠাইয়াছে, ইহাতে ভাঙ্গিয়া পড়িবার কিছু হয় নাই। কিন্ত মনে মনে অভিশাপ দিল, যে পি-ডি-এফ এর জন্য আমাকে এইরূপ স্নাব করিলে সেই পি-ডি-এফ তোমার কাল হইবে।



(পাঠক এই অভিশাপ লইয়া এখনি কোন কমেন্ট মারিবার সময় হয় নাই। শুধু এটুকু প্রকাশ থাক, এই লেখা ও অভিশাপ এই উপন্যাসের তিনটি অধ্যায়ই ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে নায়ক কে হন্ট করিতে, তখন তাহার নায়িকা অন্য, তখন তাহর ভিন্ন পরিবেশ। তবু পি-ডি-এফ থকিবে।)



লেখার পরে বিপিন বুঝিল, কি ভয়ানক ভ্রান্তির পথে উহার জিনিয়াস ও জীবন বহিয়া যাইতেছিল। সে শুধু প্রিস্টিনকে ভালবসে, শুধু তাহাকেই চায়, শুধু তাহারি জন্য সে আজ তার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাসাদোপম অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়িয়া, বজরায় পোকা-মাকড়দের সাথে দিন কাটাইতেছে। সে তাহাকে প্রেম নিবেদন করিল, প্রত্যাখ্যাত হইল, আবার করিল। আধুনিক কথ্য ভাষায় বলিতে গেলে বিপিন একটি লুপে পড়িয়া গেল। নিরলস ভাবে সে দিনে তিনবার প্রত্যেকটি মিলের পরে এই কাজটি নিষ্ঠার সাথে করে। এতেই সে আনন্দ পায়। তাহার চাওয়ার কিছুই নাই। এদিকে বিপ্লব আসন্ন। এমনি এক সঙ্কটময় সময়ের প্রাক্কালে বিপিন প্রিস্টিনকে তাহার লেখাটি দেখাইল। 'পল্টারজিস্ট' ধর্মী মুভিতে দুষ্ট অশরীরি আত্মা যেমন পোজেজ্ড দেহকে সজোরে ছুড়িয়া মারে, তদরূপ এক অলৌকিক শক্তি প্রিস্টিন কে দু'হাত ছিটকাইয়া দিল।

'এ-এটা, এটা কি লিখেছ তুমি?'
'কেন, ভাল না?'
'আমি তোমাকে একটি কথায় বলিতে পারি, মহাপ্রলয় যদি ত্বরান্বিত করিতে না চাহ এই লেখাটিকে নেট-আলোক দেখাইয়ো না । ইহাতে সবার ঘোর অমঙ্গল'



কথা শেষ হইল না, বজরা আক্রান্ত হইল। রঙ্গলালের তৈরি করা নুনুকামান গুলি কোন কাজে দিল না । পূর্বনির্ধারিত রণকৌশল অনুযায়ী বিপিন সম্মুখে দাড়াইল। ইহাতে লাভ এটাই, উহার মুখাবয়ব দেখমাত্রই শত্রুপক্ষের সমস্ত অস্ত্র উহার দিকেই নিক্ষিপ্ত হইবে। বজরার ক্ষয়ক্ষতি সামান্য হইবে । অস্ত্র বলিতে বিষ্ঠার গোলা, ডিম্ব, লাল কাপড়ে মোড়া শুয়োরের বিচি, ইত্যদি। সিপিএম পরম উৎসাহে বিপিনের দিকে এগুলি ছুঁড়িতে লাগিল।


সহসা বিপিন খেয়াল করিল উহার চারিপাশে কেহ নাই। ও বজরাটি ডুবন্ত। এতদিনের এই নদী-পথের জীবন এক লহমায় মায়া অনুভব হইল।


রঙ্গলাল, মশা, এই বজরা, রঙ্গমঞ্চের ম্যজিকের মত কেমন মিলাইয়া যাইতেছে। প্যাসিফিক এর হিমশীতল সমাধিতে তলিয়া যাইতে যাইতে বিপিন চন্দ্র মানসচক্ষে শুধু একজোড়া বিষণ্ণ চোখ দেখিতে পাইল। শেষে সেটিও মিলাইয়া গেল।


বিষ্ঠার তীব্র গন্ধে বিপিনের জ্ঞান ফিরিল। সবিস্ময়ে সে আবিষ্কার করিল, সে কেবল জীবিতই নহে, জলস্রোতে বহু দূর ভাসিয়া আসিয়াছে। কলেজের সুইমিঙ্গ প্রাক্টিসের সময় সে এক প্রান্তে ডুব দিয়া অন্য প্রান্তে উঠিত । কিন্তু এখন তাহার বডি ক্লক জানান দিল, বেশ খানিকটা কাল অতিবাহিত হইয়াছে। এক বৎসর তো হইবেই হইবে। সারফেসে ভাসিতে ভাসিতে সে একটু চোখ মেলিয়া চাহিল। পারের সমীপবর্তী হইতেই শ্যওলা, কাদা ও জঞ্জালের এক বিস্তীর্ণ লেয়ার-মধ্যে সে নিজেকে পাইল। ইহা প্যাসিফিক নহে , অতলান্তিক হইতে পারে না। অতি পরিচিত পরিবেশ। সুদূরে একটি সেতুর উপরে যানজটের চিত্র । তীরের কাছে সারি দিয়ে বাঁধা কিছু ঘাসফুল-এর সারি । সেই সারির দিকে অপলক দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে বিপিন রিয়ালাইজ করিল কালের রথ তাহাকে ২০১১ র দোরগোড়ায় আনিয়া ফেলিয়াছে।

স্থান : শহর কলিকাতা।


প্রথম খন্ডের সমাপ্তি।

(ক্রমশ..)

Friday, July 10, 2009

ভাট বকা ঃ উবার (über) না উন্মত্ত গাম্বাটপনা


[ ডঃ মারিও মেজরস্কি : ভাট বকার ওপর প্রায় ১০০ টি গবেষনা পত্রে প্রমান করেছেন ভাট একটি মানসিক রোগ]
http://www.scientology.org/
http://en.wikipedia.org/wiki/Mario_Majorski]


সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্স সম্প্রতি সমকামিতা কে তার ভাট-আসরে যুক্ত করেছেন।[1] ক্যালকম থেকে পিআইডাব্লু বি, গাজীব থেকে দিস্তা, সর্বত্র সকলে সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের এই বৈপ্লবিক রায়ে উদ্বেলিত[2] -- ব্যাপারটা দেখে মনে হতেই পারে ভাট বকা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া! এবং এর সম্পূর্ণ সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়া উচিত!


লাগামহীন অযৌক্তিক ভাট স্বাভাবিক/অস্বাভাবিক এইসব শব্দগুলো ভীষণ ভাবে বেমানান। এই নিয়ে থ্রেড ঘাঁটলে পক্ষে হাজারো বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা পাওয়া যাবে[3], কিন্ত তার থেকে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা সম্ভব না। কারণ এরকম দশটা সমীক্ষার বিপরীতে আমি লক্ষটা সমীক্ষার লিঙ্ক দিতে পারি -- যেগুলো সবি সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের অনুগত ভাট ওয়েবসাইট থেকে তোলা।[4][5] রেনেসাঁ-আধুনিকতার উত্তরাধিকার একমাত্রিক লজিকাল কাঠামোর ক্ষুদ্র পরিধিতে যাদের অবস্থান, তারা ভাটের জবাবে বিজ্ঞান আউড়ায়। পোমনাথের মত উত্তর-আধুনিক'রা সে বিচ্যুতি মুক্ত। ওরা বোঝে, তাই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসায় না।


আরেক র্যাডিক্যাল নব্য-কম্যুনিস্ট উদ্দালক গুহ ও র্যাভিশিং লইয়ার, ফেমিনিস্ট, অ্যাক্টিভিস্ট রুমা সেন যথাক্রমে "পিডিএফ ডায়েরিস" ও "আম্মো রামদেব হতে চাই" নামক গ্রন্থে (২০০৯) মত প্রকাশ করেছিলেন, ফিলোসোফারদের অবাধ ভাটের অনুমতি দেওয়া উচিত। কারণ, তাদের ওপর যেসব শারীরিক ও মানসিক ছোবল যথাক্রমে ঘরের স্প্রিং-কোবরা[6] ও অফিসের বস্ মেরে থাকে, তা থেকেই নাকি অরকূটীয় ভার্বাল আমাশা এবং অচরিতার্থ মর্ষকামের জন্ম হয়। উপরন্তু উ.গু. জানাচ্ছেন[11], এই ভাটপ্রেমী ভাটিয়ালের বাল্যকালে এক বিকৃতকামী বৈজ্ঞানিক কর্তৃক তাঁর মগজের ঘিলুর শ্লীলতাহানি হয়। যার ফলে, পরবর্তী জীবনে তাঁর মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে ও এক অভিনব পদ্ধতিতে - নেড়ামুন্ডির ওপর শূন্য বালতি উপুর করে নিয়মিত রব জম্বির[7] মধুর সংগীতের সাথে শ্রোতা ও দর্শকদের বাজানো ডুগডুগি সহযোগে ট্যাঙ্গো নেচে নেচে - আপন মনে বিরাট-িশশু খেলিতে ও ছঁিড়িতে থাকেন। আবার, ২০০৯ সালে আমেরিকান সাইক্রিয়াটিস্ট এসোসিয়েশন জানাচ্ছে মানসিক বিপর্যস্ত বিরাটশিশুদের এইপ্রকার কিম্ভুত নৃত্যগীতাদিতে আকর্ষণ নাকি স্বাভাবিক! আবার এর বিরুদ্ধেও প্রচুর গবেষণা পত্র আছে! এর পরবর্ত্তীতে PIWB সরকার মেম্বারদের কম্যুনিটিতে প্রবেশের ন্যূনতম মানসিক বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ৫ করে! যাতে ফেমিনিস্ট, র্যাশনালিস্ট, পোমো, হোমো ও লিবারালরা মর্ষকামী বিরাটশিশুদের ভাট বকার ওপর ছুরি-কাঁচি চালালে তা খিল্লি বলে গণ্য না হয়!



যাইহোক যে কথাটা আমি বলতে চাইছি -- সেটা হচ্ছে এই -- ভাট বকা স্বাভাবিক তা সাইকোএনালাইসিসের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে বলা যায় না। স্যার কার্ল পপারের বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী সাইকোএনালাইসিস আবার বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্তই না - কারণ ফলসিফিকেশন সম্ভব না অনেক সিদ্ধান্তের। কারণ ওগুলো জন্ম মাত্রই ফলসিফায়ড। যেমন সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্স এর এক্সট্রিম ভাট। মরার ওপর খাড়ার ঘা না দিলেই কি চলে না!



গে এক্টিভিস্টরা গেল গেল রব তোলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের অধিকারী ভদ্রলোক টি কম্যুনিটিতে হিরো হয়ে গেলেন-কারণ তার নিজের দেওয়া লিঙ্ক তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে। একবিংশ শতাব্দীর ডায়ালেক্টিস এক নতুন মাত্রা পাই। টুকলিবাজ লেনিনের বশংবদ মাথামোটা কমিরা প্রশ্ন তুলেছেন, তার বোধশক্তি নিয়ে, বলছেন লিঙ্ক সাম্পলিং ইচ্ছাকৃত ভাবে বায়াস করা, রেজাল্ট ইনকনক্লুসিভ। কিন্ত বিপ্লবের পালে একবার হাওয়া লাগলে তা থামে না। 'টেল অফ টু সিটিস' এর মাদাম দিফার্জের মত তার কন্ঠে শুনতে পাই আমরা - 'Tell wind and fire when to stop, don't tell me'!


সমকামিতা নিয়ে ভাট ভাল কি মন্দ-সেটা নিয়ে মনোবিজ্ঞান কোন বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে আসতে পারে নি-সম্ভবত পারবেও না। কারণ মন কৃষিকাজ জানে না। তাই ভাট-উটপাদন প্রক্রিয়া মনোবিজ্ঞানীদের কাছে অধরা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সব থেকে বড় কথা মনোবিজ্ঞান আদতেই কোন বিজ্ঞান না-তা বিজ্ঞানের পপারিয়ান ফলসিফিকেশন সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। পপার না, ভাট বুঝতে হলে পাপড় দিয়ে বুঝতে হবে। "অন্তরমহল" (rare scene 1)[8] দ্রষ্টব্য।


সুতরাং যখন দাবী করছে সমকামিতা প্রমাণিত ভাবে স্বাভাবিক--অত্যন্ত ভুল তথ্য জানাচ্ছে লোকজনকে। বিজ্ঞান এমন কোন সিদ্ধান্তে আসে নি। আসা সম্ভবও না।


তাহলে সমকামিতার বিয়ে ভাট এর সাথে যুক্ত আইনগুলি কিভাবে তৈরী হবে? কমিউনিটিগুলি কিভাবে ভাট বকার প্রতি আইন তৈরী করবে? এই ক্ষেত্রে GKP - Gross Khilli Product কে প্রাধান্য দিতে হবে। GKP-র অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতের member আকর্ষন। অর্থাৎ এই ধরনের ভাট আগামী দিনের নাগরিকদের ওপর কি প্রভাব ফেলবে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।


সেই দিক দিয়ে দেখলে কি দেখা যাচ্ছে?


[১] মাত্র .০১% [PIWB-র হিসাব ১/৬৯১] সমকামিতা নিয়ে ভাট সমর্থন করে । তথ্য দিয়ে। এবং সেই সমর্থনকারী তথ্য সমূহের ভাট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশী। অথচ প্রতি দিনে গড়ে একটি করে ভাট ধারণ না করলে PIWB নিয়ে পোমনাথের স্বপ্ন পূরণ হয় না। তাহলে সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের বাজার দর দাঁড়াচ্ছে ইনফিনিটি! কমিউনিটিতে নিত্যনতুন মামনি আসার জন্যে সমকামিতা নিয়ে ভাট অংশত দায়ী।


[২] ভাট-কামী রা অবাধ ফ্লার্টিং এর অধিকার চাইছে। স্প্রিং-কোবড়া'রা এই সিদ্ধান্ত মেনেই নিয়েছেন। ভাটকামিদের ওপর থ্রেডে-থ্রেডে সার্ভে চালিয়ে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে -সেটা হল এরা দুর্যোধনের মত এপিকাল চরিত্রদের থেকে যুবতীদের সঙ্গী হিসেবে বেশী পছন্দ করেন।

[৩] লোবোটমির সংখ্যাও ভাটবাদী দের মধ্যে বেশী। কারন তারা দ্রুত তাদের ব্রেন বদলায়। অনেকের ধারনায়, এরা ভারতের প্রযুক্তি সংস্থা দ্বারা নির্মিত স্পেশাল রোবট। তাই অর্কুটের অনেক রাজনৈতিক ফোরামেই এদের প্রবেশাধিকার নেই।

[৪] ব্যাক্তিস্বাধীনতার সীমানা কোথায়? সমাজ থেকে আমরা যা পাচ্ছি, তা ফিরিয়ে না দেওয়ার স্বাধীনতা কি আমাদের আছে? ৩০ ফুট শুঁড়ওলা গন্ডার বা প্রবল প্রতাপান্বিত সিংহদেরও নেই।[9] তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে দায় মেটায়। মানবশিশু মায়ের হাত ধরে খলখলিয়ে রেয়ার অফ দ্য রেয়ারেস্ট সিন অবলোকন করে।[10] বিবর্তন এভাবেই লার্ন্ড হয় । কোন সমাজে সেই ব্যাক্তিস্বাধীনতা যদি দেওয়া যায়, যা সামাজিক লজিস্টিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে, অচিরেই সেই সমাজ ধ্বংস হবে। কথাগুলি রাগ-শিশু একদা তার এক বিখ্যাত লম্বা পোস্টে লিখেছিলেন। সমকামিতা নিয়ে এন্তার ভাট বকা শুনে আর বুঝে, তা ছড়িয়ে না দেওয়ার অধিকার - সেই ধরনের একটি অধিকার। অর্থাৎ সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্স আমাদের ভাট উপহার দিলেন। এবার আমাদের তাকে সেই ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার পালা -- অর্থাৎ আমাদের সেই ভাট স্পুফ করার কথা -- আমরা করলাম না। এটি সামাজিক অপরাধ না হতে পারে -- কিন্ত সামাজিক ভাবে এই ধরনের ভ্রান্ত ব্যাক্তিস্বাধীনতাকে প্রশ্রয় দিলে ভবিষ্যত ভাটিয়ালির অভাবে সমাজ তথা calcomm ও PIWB সরকারের যুগ্মভাবে প্রদত্ত "ভাটনাগর" পুরস্কারটিই উঠে যাবে।


পরিশেষে ঐরাবত জানাচ্ছেন - "মোদ্দা কথা সমকামিতা নিয়ে কিস্যু না জেনে আর্টিকল লিখে ফেলা মোটেও কোন সুস্থ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি নয়। এ সম্পূর্ণ এক ধরনের দ্বায়িত্বহীন আটভাট বকা যা শুধু শারীরিক বা সামাজিক বা মানসিক রোগের জন্ম দিতে পারে। এটা সুস্থ না অসুস্থ, তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক তর্ক বৃথা। কিন্ত সমাজের আগামী দিনের নাগরিকদের জন্যে এটা একটা ভয়ঙ্কর ট্রেন্ড। যাকে কোনভাবেই সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। এবং কিস্যু না জেনে সমকামিতা নিয়ে এদিক সেদিক থেকে কপি পেস্ট মারা আরেক ধরনের অবুঝ হনুকরন।"

----
সূত্রঃ


[3]For a review, see Utsav, Subhanu, Santanu et al., PIWB, 18 Nov 2008, "The Man who is....... In Retrospective - Biplab Pal" ( http://www.orkut.com/Main#CommMsgs.aspx?cmm=62384129&tid=5269964153985887098&kw=Biplab+pal )