Thursday, February 11, 2010

তিন কন্যা-পর্ব ২

চরিত্র-তালিকা

১) বিপিন চন্দ্র
২) সুনয়না সেন
৩) রঙ্গলাল
৪) মোল্লা ফকিরুদ্দিন
৫) কাপালিক শ্রী শ্রী তর্কালঙ্কার আচার্য্য
৬) আচু
৭) ইলু-দা
৮) বিমর্ষ ঘোষ
৯) শ্যামা
১০) উদ্দালক গুহ
১১) এক্সট্রা ঃ দরদী পাগল, সিপিএম ক্যাডার, কোর্টরুম জনতা, চাপরাশী প্রভৃতি
১২) গেস্ট এপিয়ারেন্স ঃ ব্রিঞ্জল দাস, দুর্যোধন
.
.
.

(বি.দ্র. :- এই উপন্যাসটির গতিপ্রকৃতি প্রকৃতপ্রস্তাবে বিবর্তনের নিয়মে অগ্রসর হইবে; সেহেতু সম্পূর্ণ চরিত্র তালিকা দেওয়া সম্ভব নহে, পাঠকের সুবিধার্থে কেবলমাত্র আংশিক দেওয়া হইল। বিবর্তনের ধস্তাধস্তির মধ্য দিয়াই কাহারো উদ্ভব হইবে, কেহ মিসিং হইবে, কেহ বা টিকিয়া থাকিয়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জয়মাল্যটি গলায় পড়িবে। )

---



মোল্লা ফকিরুদ্দিন


বিপিন বাবু চাট খান বেশী, মাল খান কম বিপিনের মতে, তাত্ত্বিক আলোচনা ব্যাপারটি দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়ার সানি ওয়েদারে একটি লং ড্রাইভের সহিত তুলনীয় ২০ বৎসরের নিরলস অভ্যাস এই দুটি ভোকেশানেই তাহাকে একপ্রকার সাবলীলতা দিয়াছে তবু অপরিচিত টেরেন অসোয়াস্তি প্রসব করে পথভ্রান্ত চালক যে ডেস্পারেশান সহিত জি.পি.এস. খোঁজে, বিপিন বাবু অনুরূপ প্যানিকে উইকি হাতড়ে বেড়ান বিশ্লেষনের চাকু দিয়ে কাটা কোন পাহাড়ি পথ, বা অরিজিনাল রেফারেন্সের ডাউনলোড বাটনে লুক্কায়িত কোন আত্মঘাতী অতল খাদের সম্ভাবনা--এ সকলি পরিচিত এম্বুশিং সিম্পটম বিপিন সতর্ক হন স্টিয়ারিং এ তাহার হাত ঈষৎ কাঁপে এ হেন পরিস্থিতিতে বিপিন বাবু ৬০-৭০ এর বলিউডে ভিলেনের ডেনে অনুপ্রবেশকারী সৎ ও ইমানদার পুলিশ-অফ্সর বনে যান জনি ওয়াকারের পেয়ালা হস্তে, হেলেনের নৃত্য উপভোগ করিতে করিতে, ইহারা ইঙ্গিতপূর্ণ তির্যক হাসি দিতেন ঠিকই, কিন্তু মধ্যবিত্ত মরালস হারাইবার ভয়ে সুরা ওষ্ঠ-স্পর্শ করিতেন না উপরন্তু ধান্দা করিতেন, কি করিয়া ফুলের টবে দামী মাল টাস্পিল করা যায় বিপিনেরও ভয়, এই বুঝি বসে বসে DUI খাইয়া গেলেন একাডেমিক বাতেলার জগতে তাহার সাধের লাইসেন্সটি এই বুঝি খোয়া গেল তাহার লাইসেনশিয়াস নেচার তখন আর কোন কাজে আসিবে কি?


তাই এই সব সিচুয়েশানে বিপিন বাবু চাট খান বেশী আর, প্রতিপক্ষকে স্টাডি করেন


সমস্যাটা হয় যখন স্টাডির বিষয় হয় দাস ক্যপিটালের তিন ভলিউম অথবা মাও-লিন পত্র-সংকলন কলেজকাল হইতেই বিষয়ের গভীরতা, ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্যে বিপিন খেই হারিয়ে ফেলেন আজো তাহার অন্যথা হইল না প্রতিপক্ষের বিশালতা ও আয়তন তাহকে আচ্ছন্ন করিল কিন্তু একি! প্রতিপক্ষ তো কোন রচনা সমগ্র নয়, বরং পূর্বোল্লিখিত উদাহরন সহ সহস্র সহস্র পান্ডুলিপি একা মস্তকে ধারণকারী একটি মানুষ তাহার পরনে সাদা কুর্তা পাজামা ঢোলা ব্লেজার। মুখ ভর্তি দাড়ি মাথায় ফেজ টুপি চোখে রোষাগ্নি উদরে দু পেগ জ্যাক ড্যানিয়েলস আর মনে?


মারিঘেলা রচিত গেরিলা-ওয়ারফেয়ার বুকলেট হইতে আরোহিত ফান্ডা সমৃদ্ধ মনে? এক বহু-ব্যবহৃত এমবুশিং টেকনিক


বিপিন পড়িল একটু ধন্দে পাঠকের সাথে বিপিন-এর শেষ সাক্ষাত হইয়াছিল, হুগলী তীরের শ্যাওলাকীর্ণ গঙ্গাবক্ষে উপন্যাস প্রকাশনায় বিলম্বে অধৈর্য পাঠক, আপনারা এসিউম করিয়া লইয়াছিলেন, বজরার সেই ঝঞ্ঝা-মুখরিত দিন গুলির পর নায়কের জীবনে আর লিখিবার মত কিছু ঘটে নাই মূঢ় পাঠক! নিজ নিজ মান্ডেন এক্সিস্টেন্সের মাপক লইয়া আমার নায়কের মুল্যায়ণ করিতে আসিবেন না, প্লীজ! মিনতি করি সত্য হল ইহাই: পরবর্তী ঘটনাগুলির চমৎকারিত্ব ও আকস্মিকতা আমাকে এতটাই হতভম্ব করিয়ছিল, যে এ সকল ক্ষণ উহা হইতে উদ্ভুত ইম্প্রেশনগুলি এসিমিলেট করিতেই চলিয়া গিয়াছিল আহেম ;-)


সে যাহা হউক, কথা হইল কলিকাতায় আসিবার পর বিপিনের নিকট সময় ছিল না পোস্ট-মাস্টার রূপে তাহার খ্যাতির প্রচার প্রাচ্যেও ছিল বাম-বিরোধী বুদ্ধিজীবি শিবিরে বিপিন চন্দ্র একটি পরিচিত নাম বিপিন যখন গঙ্গায় সাঁতার দিতে ব্যস্ত, তখন আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দিল্লী হইতে দুরন্ত বেগে একটি প্যকেজ বাগাইয়া ফুর্ফুরে মেজাজে ও ওয়েদারে হাওড়া ব্রিজের উপর লাল বাতি জ্বালাইয়া যাইতেছিলেন এবং বিপিনকে তৎক্ষণাৎ স্পট করিলেন মুহুর্ত বিলম্ব না করিয়া বিপিনের সাদর অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করা হয়!


বিপিন দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ বে-ওয়াচ তাহার রক্তে সি.এম. ভাবিলেন তাহার অভ্যর্থনাও হোক কোন অভিনব মার্কিন কায়দায়

সেই অনুসারে স্থির হইল, সবুজ সুইমস্যুট পরিহিত কতিপয় লাইফ-গার্ড বিপিনকে সযত্নে জলকেলি করিতে করিতে তীরে তুলিয়া আনিবে ইহার পর এক চ্যাম্পিয়ান আন্টি-কমির যোগ্য সম্মানে উহাকে স্কন্ধে তুলিয়া শহর পরিক্রমা করিবে সবুজ স্যুট দিগকে ডাইভ দিতে দেখিয়া বিপিনের মনে হইল সে পুনরায় আঙ্কল স্যাম এর স্বপ্ন-রাজ্যে ফিরিয়া যাইতেছে


কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তাহার ঠাহর হয়, ইহারা সান ডিয়েগো বিচের পেশাদার কোনমতেই নয়, বরং এক একটি নেশাখোড় টি-এম-সি ক্যাডার অত্যন্ত বেদনার সহিত বিপিনের নেক্স্ট রিয়ালাইজেশান - ইহারা সবাই পুরুষ এক জনৈক ক্যাডারের ট্রান্সপেরেন্ট স্যুট হইতে প্রস্ফুটিত লাল ট্যাঙ্ক টপের আড়ালে পামেলা-সাইজ স্তন তাহাকে কিয়ৎকাল বিভ্রান্ত করে বটে কিন্তু উত্তোলন পর্বে সেই জনৈকের কন্ঠেই পরিষ্কার বাংলায় --'কি লদলদে পাছা মাইরি, তবে শ্রীলেখাদির মত না, আমি একবার ডামি দিতে গিয়ে তুলেছিলাম' (এবং প্রত্যুত্তরে বন্ধুর 'বাঁড়া ডালডাটা সঙ্গে আনবি তো' ) শুনিয়া বিপিন বাবুর মানসিক পদ-যুগল ধরণী স্পর্শ করে বিপিন চন্দ্রের কলিকাতা পদার্পণ সম্পূর্ণ হয়


এ হেন রাজকীয় সমাদরের পর বিপিনের এই সেমিনার, ঐ কনফারেন্সে গিয়া সময় কাটে বন্ধুরা তাহাকে ও! ক্যালকাটা-য় ডিনারে ডাকে, বিরুদ্ধ মতাবলম্বীরা ওপেন ডিবেট করিতে তাহাকে টাউন হলে আহ্বান জানায় সেই বিরোধী শিবিরের একজন নামজাদা প্রতিনিধি তাহার আজকের প্রতিপক্ষ ইসলামিক স্কলার জহর নায়কের নাম কে না জানে! এনার সাথে বিপিন এর ইন্টার্নেট ডিবেট সুপ্রসিদ্ধ শোনা যায়, এসবের কারণেই ফতোয়া লিস্টে চোষলিমার পরেই বিপিনের স্থান সত্যের পূজারী বিপিন এগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব কোন দিনই দেয়নি জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, তবু হিপোক্রিট কমিদের ন্যায় মুসলিম মৌলবাদের বিপদ হইতে চোখ ফিরাইয়া নিবে না সে কদাপি না চাড্ডি -হাড্ডি এক হইলেও না


সেই জহরের নাম্নার ওয়ান শিষ্য মোল্লা ফকিরুদ্দিন (ভার্চুয়াল ফোরামে ও জিহাদি রাপের দুনিয়ায মো-ফাক এলায়াসে যিনি অধিক পরিচিত) আজ তাহার সামনের চেয়ারে বিপুলের ধন্দের কারন অনেকগুলি প্রথমত উর্দু ইংরেজী দিয়া শুরু করিলেও দু'পাত্রের পর ফকির সাহেব শান্তিপুরি বাংলায় বাক্যালাপ শুরু করেন দ্বিজু রায়ের নাটকে শাজাহান যেমন বলিত বিস্ময় প্রকাশ করিলে ফকিরুদ্দিন ঘোষণা করেন, আফগান কমিউনিস্ট পার্টির আপিসে তাহার কিছুদিন আসা যাওয়া হয় সেখানে সরোজ দত্তর কবিতার পুস্্তু অনুবাদ পাইয়া, অরিজিনালটিকে ধরেন ও শীঘ্রই ভাষার প্রেমে পড়ে যান ক্রমে বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ ধরিবেন বিপিন আরো আশ্চর্য হন এই ভেবে, পাঁচ-ওয়ক্ত নমাজ পড়নেওয়ালা সাচ্চা মুসলমান, পবিত্র কোরানের প্রতি অক্ষর মাননেওয়ালা এক পায়াস মৌলবী, তামাম কলিকাতায় এই স্থান টিকেই বেছে নিল, ডিনার প্লেস রূপে! শেষে কিনা অলিপাব!


দ্বিতীয়ত, তর্ক করিতে করিতে বিপিন টের পায়, ইসলামের থেকে মার্ক্সবাদে মোল্লার জ্ঞান ও ইনক্লিনেশান বেশী বিপিনের ধন্দ ঠাউরিয়া মোল্লা জানান, উনি কাবুলে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আন্টি-সোভিয়েট সাবভার্সিভ ওপারেশন ইউনিটের তাত্ত্বিক বিভাগের হেড ছিলেন| মার্ক্সিসমকে থিওরিটিকালি পরাস্ত করিবার জন্য এসব নিয়ে এককালে প্রচুর চর্চা করেছেন উইথ আ সেন্স ওফ আইরনি বিপিন নোট করেন, মোল্লা বেশে মার্কসবাদি বুলি আউড়ে মোল্লা মার্স্কীয় প্যরাডাইমের মৌলবাদি দিকটাই কেমন উলঙ্গ করিয়া দিতেছেন তৃতীয় পেগান্তে বিপিনের মনে ধন্দ ও আইরনির সথে একটি নতুন অনুভূতি যুক্ত হয়-- ভয়! কিছুক্ষণ হল ফকির সাহেবের মেজাজ ও কন্ঠস্বর দুই-ই বড় তিরিক্ষি আকার ধারণ করিয়াছে জিভের সাথে জড়িয়ে গেছে ভাষা ঊর্দু-সাধু মিশ্রিত এক অদ্ভুত বাংলা তাহার কন্ঠে এবং প্রতি বাক্যের পর উচ্চৈ:স্বরে একটি ফতোয়া-প্রদান কারী (এমনি তার ডেলিভারির ধরন) ঊর্দু শ্লোক ভাষাগত কারণে বিপিন যাহা বুঝিতে পারে না, অথচ মনে হয় অতি-পরিচিত


'অবিশ্বাসী কাফির, এখন দেখ কি করিয়া তোমার নাদুস নুদুস এন-আর-আই শাইনিং পোদ মারিয়া হিন্দুস্তান-পাকিস্তান করিয়া দিই, ইনশাল্লাহ
রহমান আল রহিম বিসমিল আসফকুল্লা'


বিপিনের মনে পড়িল কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় বিসমিল প্রসাদ আর আস্ফকুল্লা দুজন বিপ্লবীর নাম

-'কাকোরি?'

-'ইমবেসিল আব্বাচোদ আমার নসিবে যদি থাকত তোকে কাটিন কাবাব বানাইয়া খাইতাম
'মহম্মদ ইলিয়াস মুজফ্ফর ভাসানী নাজিবুল্লাহ'


এই আপাত-অসংলগ্ন কিন্তু আদতে মনোজ্ঞ ও জটিল কথোপকথনটির ডিটেলস দিয়া পাঠকদের বোর করিব না কেহই এতে ইন্টারেস্টেড হইবে না ওয়েল, অল্মোস্ট কেহই এটি বলার কারণ, সে নিশিরাতে মধুশালায় অন্তত একজন ব্যক্তি--যাহার ইন্টারেস্টের মাত্রা ও প্রকৃতি সাধারণ মাপকাঠিতে বিচার করা ঠিক হইবে না পাঠক পাঠিকারা, আমাকে এই চরিত্রটি প্লীজ ডিস্ক্রাইব করিতে বলিবেন না কারণ আমি পারিব না নভেলে ইনি ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবেন কিন্তু কভু সম্পূর্ণ রূপে ধরা দিবেন না আধো আলোছায়ায় তাহার সিল্যুয়েট ও চারমিনার-নির্গত লাল ধঁোয়ার রিং হইতে আমরা তাহার উপস্থিতি আন্দাজ করিব মাত্র, তাহার বেশী নহে এই ইল্যুসিভ ক্যারেক্টারকে আমরা আদর করে ইলু-দা ডাকতে পারি ইলু-দা কি করে, তাহার দর্শন কি, তাহার অতীত কোথা-- এসকল প্রশ্ন আদি অপার বিশ্ব রহস্যমালা সিরিজের টপ ফাইভে আসিলেও একটি বিশেষ ক্ষমতা-ধারী মনুষ্য-গোষ্ঠীর নিকট সিটার-তুল্য


ইলুদা ছাড়াও যারা সীনে আছেন, তাহারা হলেন অলিপাবের ওয়েটার-কুল


বহু দিনের অভ্যেস ও অধ্যবসায়ের জোরে অলিপাবের ওয়েটার মাত্রই এক অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী পশচার, সিগারেট ধরার স্টাইল, কাশির ধরণ, ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর নানান খুঁটিনাটির উপর ভিত্তি করিয়া ইহারা বলিয়া দিতে পারে যে কোন মাতালের পরিচয়


আপনি যদি তিরিশের দশকের কলিকাতার অলিপাবে গিয়া প্রশ্ন করিতেন, 'ওয়েটার, এখানে আইস, প্রমথেশ বড়ুয়ার ফিচার ও আন্দামানের একাকীত্ব লইয়া কোণার টেবিলে উপবিষ্ট কে ঐ আনমনা ভ্যাট সিকস্টিনাইন সিপ করিতেছে? কে ঐ হতাশ যুবা?' উত্তর আসিত 'ব্যর্থ প্রেমিক, স্যার'


আপনি যদি সত্তরের দশকের অলিপাবে গিয়ে প্রশ্ন করতেন, 'এই এদিকে আয়, খালাসীটোলা থেকে মাল তুলে এনে কোণার টেবিলে বসে 'জয় বাংলা' শ্লোগান দিচ্ছে, ওটা কে রে? উত্তর আসিত 'হাঙ্গরি কবি, স্যার'


আপনি যদি আজ ইলুদাকে দেখিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন 'এই,দেখ তো, কোণার টেবিলে, স্ল্লাউচিং পোসিশানে বসে আছে, ঐ যে কাকে-ঠোকরানো খোঁচা দাড়ি,
খেকুড়ে মুখ বানিয়ে রেড লেবেল টানছে দেখেচিস?, কিরম একটা আন-সিওর হাব-ভাব, কিরম একটা জাম্পি নেচার, অল-টাইম চোখ ঘোরে যেন সিগনাল পেলেই পদাতিক সিনেমার ধৃতিমানের মত পুলিশ ভ্যান ব্রেক করে উত্তর কলকেতার সরু গলি দিয়ে একছুট লাগাবে? কে রে, জানিস কে? বলতে পারবি?'


হাসিমুখ ওয়েটারের প্রম্প্ট উত্তর ' দ্য আনসার লাইস ইন ইওর কোশ্চেন, প্রাক্তন নকশাল স্যার'


ইলুদা ফকির কে মনোযোগ সহকারে দেখিতেছিল ও ডেসপারেট ভাবে কিছু একটা সিগনাল করিতেছিল পাঠক, সুভাষ মুখুজ্জের 'ছেলে গেছে বনে' কবিতাখানি আশা করি পড়া আছে বারে বসিয়া রেনেগেড পিতার বিলাপ, অন্তর্দাহ, ও সর্বান্তে পুত্রের হস্তে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত পতাকা দেখিবার বাসনা ইলুদার চোখে সেই ফিরে আসার আকুতি তবে বন থেকে না, ধুমকি থেকে কিছুতেই কাজ হচ্ছে না দেখে ইলুদা তার প্রেসিডেন্সি জেলের দিনগুলির সময় হইতে সযত্নে রক্ষিত ও প্রতিপালিত হাড়-কাঁপানো কাশিটা কাশলেন



ফকিরের সম্বিৎ ফিরল ততক্ষণে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে ইসলামে সাম্যের ধারণা থেকে আভ্যন্তরীণ বাজারে কম্প্রাদোর বুর্জোয়ার প্রভাব পর্যন্ত বিপিন-এর বক্তব্য- বাজার বড় কঠিন জিনিস, মার্ক্সিস্টরা পঁুজিবাদের পতন প্রেডিক্ট করতে অক্ষম, কারণ বাজারের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করা সহজ নহে বাজার...



তিতিবিরক্ত হইয়া ফকির বলিল 'তুমি বাজার দেখিতে চাও, আমি তোমায় বাজার দেখাইব কাল এই ঠিকানায় চলিয়া আইস, আমার লোক তোমাকে পিক আপ করিবে।' আর হ্যাঁ, তুমি কি মাছ খেতে ভালবাস?'



বিপিন বিদায় হইবার পর ইলুদা শ্যাডো হইতে বাহির হইলেন বিপিনের সীটে বসিলেন তাহার চোয়াল শক্ত, তাহার নয়নে তেজ
আনশিওর জাম্পি হাব-ভাব টা যেন এক কাশির যাদুবলে পিতা হইতে পুত্রে স্থানান্তরিত হইয়াছে ফকির টুপি খুলিল, পা ঘষিল ও কম্পিত হস্তে দাড়িতে হাত বুলাইল




মাছ ও বিড়াল


গ্রোসারি চেইনস, হোল ফুডসে বীতশ্রদ্ধ এন-আর-আই বিপিন চন্দ্র দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারের বিশৃঙ্খলাপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রাণ ভরিয়া নিশ্বাস নিলেন। ফকিরুদ্দিন বাজার দেখাইবে বলিয়াছিল, ফকিরুদ্দিনের লোক তাহাকে এন্টালী মার্কেটে আনিয়া ফেলিয়াছে। সে এক দিক দিয়া দেখিলে ঠিকই আছে, কিন্তু বিপিন এই অদ্ভুত রসিকতার কোন অর্থ খুঁজিয়া পাইল না।

ফকিরের চামচা বিপিনকে বাজারের এক কোণায় লইয়া গেল। এক বিশাল বপু মানুষ খড়গ-হস্তে একটি ইলিশ মাছের শিরচ্ছেদ করিতেছেন। গাত্রে নামাবলী, কপালে রক্ত-তিলক। বটির পার্শ্বে গাঁজার ছিলিম। ছিলিম হইতে নির্গত ধোঁয়া, বাজারের বাকি অংশের সাথে এক ধূসর মায়াবী আস্তরণ নির্মাণ করেছে।

বিপিনের হাসি পাইল। মৎস্য বলির এত আয়োজন সে পিতার জন্মে দেখে নাই। বলিদায়কের বাজখাঁই নাম বেদীর ঠিক উপরে এক লড়ঝরে টিনের হোর্ডিং এর শোভা বর্ধন করিছে ।
'কাপালিক শ্রী শ্রী তর্কালঙ্কার আচার্য্য'

কথা প্রসঙ্গে বিপিন জানিতে পারিল, একটি মাছ ভেট দিয়া ফকিরুদ্দিন সাহেব শুভ সম্পর্ক ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের সূচনা করিতে চাহেন। গতকালের তর্কাতর্কির জন্য উনি বিশেষ অনুতপ্ত। বিপিনের ধন্দ কমিবার বদলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইল।


বাজারে ভ্রমিতে ভ্রমিতে বিপিন খেয়াল করিলেন না কখন সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিল। সাতটায় বিপিনের মনে হইল, ফেরা দরকার। জনশূন্য বাজার । বিপিন শক্ত হাতে ফকিরুদ্দিনের উপহার মৎস্যটি লইয়া পা বাড়াইল। কাপালিক মাছটির কপালে রক্ততিলক পড়াইয়া দিয়াছে।

এমন সময়ে পথ রোধ করিল একটি কালো বিড়াল।

'হুশ হুশ হুট'

বিড়াল অনড়।

'যা যা ভাগ'

এর উত্তরে বিড়ালটি অপ্রত্যাশিত ভাবে একটি আগ্রাসী ভূমিকা গ্রহণ করিল। সম্মুখস্থ পদযুগল উঁচাইয়া মৎস্যের দেহ হইতে ঘ্রাণ লইতে উদ্যত হইল। সুগন্ধে প্রীত হইয়া একটি গ্রেট লীপ মারিল। বিড়ালের বডি ল্যঙ্গুয়েজ যদি বঙ্গ ভাষায় অনুবাদ করা যাইত, তাহা অনেকটা এইপ্রকার দাঁড়াইত:-

'তুই কাট, আমার এই মছলি রানী পছন্দ হইয়াছে। আমি ইহাকে খাইব। তুই পথ দেখ'

ইহার পর যাহা ঘটিল তাহা ব্যাখ্যাতীত। বিড়ালের আস্ফালন দেখিয়া বিপিনের হাত শিথিল হইয়া অসিতেছিল ঠিকই, এবারে কি করিয়া কি হইল ঠিক বুঝা গেল না, বিপিনের করতল হইতে মাছটি পিছলাইয়া গেল। বিপিনের মনে হইল, মৃত মৎস্যটি এক অদ্ভুত যাদুবলে নিজ দেহে প্রাণ সঞ্চার করিয়া এক ডেলিকেট ম্যনুভারে তাহার বাহুপাশ ছাড়াইয়া নিল।

(গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বিপিন দক্ষিণ ক্যালির রঙ্গময় দিনগুলি স্মরণ করিল। লস এন্জেলেসের ডান্স ক্লাবগুলিতে এপারেন্টলি সিঙ্গল ও বোরড মামনি দেখিয়া উত্তেজিত বিপিন কতিপয় দেশি বন্ধু সমভিব্যাহারে যখন পিছন পিছন আসিয়া টুকি মারার স্টাইলে স্কন্ধে হাত রাখিত। এবং পরের দিনের লাঞ্চটাইমে সফটওয়ের ডিপার্টমেন্ট হেড-কে ফাইল পরিবেশনের তরে জমিয়ে রাখা দঁেতো হাসিটি নির্দ্বিধায় খরচা করিয়া বলিত 'মে আই হেব আ ডান্স প্লিস?' অনতিবিলম্বে এই ডেলিকেট ম্যনুভারগুলি পরিলক্ষিত হইত।)


এখানেই শেষ নয়।

মাছটি তাহার ডেলিকেট মুড়োটি সযত্নে পশ্চাতে হেলাইল। লেজ ও মুড়োটি মাটিতে স্থির রাখিয়া সেক্সি পেটি খান ধরণী হইতে দু-ইঞ্চি শূন্যে তুলিয়া একটি সিম্পল এক্রোবাটিক ফিট পরিবেশন করিল । ইহার পর মুড়োটি লইয়া চার পাঁচ বার লেজ-এর গোড়াটি ছোঁয়ার প্রয়াস চালাইল। ইহার পর প্রায় ৫ মিনিট নো নড়ন-চড়ন।

অতঃপর মৎস্য চোখ মারিল।

বিপিন চক্ষু মুদিল। আবার খুলিল। মাছটি পুনরায় চোখ মারিল।

এবারে বিপিন মৎস্য সমীপে নতজানু হইয়া উপবেশন করিলেন। তিন চক্ষু একত্রিত হইল। বিপিনের হৃদয়ে একটি তার ছঁিড়িল। কোন কিছু ছঁেড়ার যে আনুষঙ্গিক ব্যথা থাকে, বিপিন তাহা অনুভব করিল। গভীর বেদনার সহিত বিপিন দেখিল সম্মুখের বস্তুটি মৎস্য, নারী নয়। তবু তাহার নয়নে বহু জনমের নারীত্বের সঞ্চিত কটাক্ষ-শর। কঁাটা বাছিয়া খেলে এ মাছের স্বাদ নেওয়া যাবে না।


বিপিনের মনে আশ হইল-- হায়, এ যদি এক ইচ্ছাধারী মৎস্য-কন্যা হইত। বিপিন স্থির করিল এইরূপ কোন নারী তাহার জীবনে আসিলে সে তাহাকে জাপটাইয়া ধরিবে। কাপালিক ও ফকির দের ডিভিয়াস জগত হইতে, নির্বোধ দাঁতক্যালানে দেশি বন্ধুদের জগৎ হইতে, শত যোজন দূরে লইয়া গিয়া তাহাকে নিজের মত ভালবাসিবে।


আর, তাহার নাম রাখিবে-

সুনয়না।



সুনয়না


কলিকাতা হাইকোর্টের দাপুটে উকিল সুনয়না সেন গতকাল নাইট আউট মারিয়াছিলেন, সন্ধে সাতটার আজানে তার নিদ্রা টুটিল। প্রথমেই ক্ষিপ্রগতিতে লেপ পাশ মুক্ত হইলেন। পাশ ফিরিয়া শুইলেন। তাহার পর কি মনে হইল, তড়িৎগতিতে ঘাড় হেলাইয়া একটি এবস ও একটি নি-টাচ সমাপন করিলেন।
সুনয়না স্থির করিলেন, শরীরকে তিনি দিনের কোটার অধিক মর্যাদা দিয়া ফেলিয়াছেন। অথচ, গতকল্যের ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে মন অধিক মনোযোগ দাবী করে।


সুনয়না ভাবিতে বসিলেন।


সুনয়না সুন্দরী বুদ্ধিমতী সফল। তিনটিই অত্যধিক মাত্রায়। সাধারণতঃ এ সকল গুণাবলী বেশ কয়েক বন্ধু, হাজার খানেক প্রেমিক ও লাখ খানেক ঈর্ষান্বিতা জেনারেট করিয়া থাকে। সুনয়নার ক্ষেত্রেও করিয়াছিল। তদুপরি একটি এক্সট্রা অনাকাঙ্খিত শ্রেণী-শত্রু । ইহার কারণ সুনয়নার পেশা। সিভিল ল'য়ের জটিল ও প্রেস্টিজাস জগতের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী তরুণী সুনয়না বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেস হ্যান্ডল করিয়া থাকেন। ইহার মধ্যে কিছু রাজনৈতিক। এই সব কারণে কখনো রাষ্ট্রযন্ত্রের কখনো বা শক্তিশালী বিসনেস গোষ্ঠির সহিত সুনয়নাকে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হইতে হয়। সুনয়না দুঃসাহসী, ন্যায় বিচারের অন্তরায় কোন প্রতিষ্ঠান হোক বা কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি, যুক্তি তর্কের সাইক্লোনে প্রতিপক্ষকে খড় কুটোর মত উড়াইয়া দেওয়া তাহার বাম হস্তের ক্রীড়া।

কিন্তু যুক্তি তক্কের বাইরেও যে একটি ব্যাড ইভিল ওয়ার্ল্ড আছে, সুনয়নাদেবীর ক্ষতিসাধনে যাহার বাসিন্দাদের মোক্ষলাভ -- এই কথাটি কোর্টের সিনিয়র শুভনুধ্যায়ীরা উহাকে বুঝইয়া পারে না। ওঁরা সুনয়নাকে সারভেলেন্স ও সিকিউরিটি সাজেস্ট করেন। ফিয়ারলেস ও ফিয়ারসলি ইন্ডিপিডেন্ট সুনয়না তাহা প্রত্যাখ্যান করেন। অগত্যা একটি বোঝাপড়ার জায়গা তৈরী হয়।

সাহা ইন্সটিটুট ও হাই কোর্টের যৌথ কোলাবরেশনে কলা মন্দির প্রেক্ষাগৃহে এক টপ সিক্রেট সম্মেলনে এক অত্যাধুনিক যন্ত্রের যুগান্তকারী আইডিয়া জন্ম লাভ করে। সাহা ইন্সটিটুটের বায়ো-ফিসিক্স ডিপার্টমেন্টের ভিসিটিং সায়েন্টিস্ট ব্রিঞ্জাল দাসের জবানীতে:

'ব্যবস্থা হউক, সুনয়না দেবীর লোকেশান কো-অর্ডিনেট মনিটার করা হইবে না। উনি কোথায় আছেন কেউ জানিবে না । কিন্তু কি করছেন জানা যাবে। যেমন ধরুন ওনাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, উনি হাত-পা ছুঁড়ছেন। বা উনি ক্ষিপ্রগতিতে পালাচ্ছেন। এই সিগ্নাল গুলি আমাদের কাছে আসবে। কিন্তু কি করে?
সুনয়নার চোখের লেন্সে রিমোট সেন্সর ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। রিসেপ্টর থাকবে এক লাইভ ইলিশের চোখে। ইলিশটি থাকবে কোর্ট-আপিসের একটি স্পেশাল একুয়ারিআমে। লেন্স পরিহিত অবস্থায় সুনয়নার মোটর নার্ভ এর সমস্ত ইম্পাল্্স রিমোট সেন্সিং কতৃক ইলিশের ব্রেনে রিচ করবে । মোটর-ইমপালস কে এলেক্ট্রনিকালি কোড করে করে একটি ভার্চুয়াল সুনয়না সিমুলেট করার চেয়ে এরকম একটি বায়োলজিকাল কেরিয়ার শুধু কস্ট-এফেক্টিভই না, নয়েজ রেশিও-র দিক থেকেও অনেক গুণ একুরেট। ....'


আইডিয়ার অভিনবত্ব ভাব কাটিয়া গেলে সুনয়নার মনে হইল, স্বাধীনতা হরণের ইহা এক নূতন কৌশল বটেক! তথাকথিত শুভানুধ্যায়ীদের লইয়া তাহার অভিমত হইলঃ কতিপয় অবসর-প্রাপ্ত বৃদ্ধ যাহাদের নীরস জীবনে সোনালী বিকেলগুলি আজ আর নেই। জীর্ণ জীবন-খাতায় বাহারী পাতার অভাবে অপরের খাতা তাহারা শকুনের মত ঠুকরাইয়া বেড়ায়। ইহা চলিতে দেওয়া যায় না। সুনয়না সেই ধরণের নারী যাহার ইগো আর গোঁ দুই-ই বেশী। দায়িত্বজ্ঞানহীন আম্রু পেরেন্ট এর মত চিন্তাশিশুকে ক্রেশে একা একা খেলিতে দিয়া চলিয়া আসার পাত্রী সে নহে। বরং যত্নশীলা দেশি জননীর মত একশান লইয়া তাহার অনুসরণ করেন। সুনয়না সেই প্রত্যুষেই কোর্টরুম থেকে চুপিসারে মৎস্য তুলিল, কিন্তু উহা ডিএক্টিভেট করিবার উপায় তাহার জানা ছিল না। ব্রিঞ্জাল দাস এর ল্যাবে গাড়ী লইয়া যাইতে যাইতে তাহার ইন্টিউশান বলিল, আরো এক দায়িত্বশীল তাহার অনুসরণ করিতেছে। এন্টালী মার্কেটে সে নামিলে অনুসরণকারীও নামিল । ধরা না পড়িবার বিষম তাগিদে সুনয়না বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় একটি টিনের শেড-তলে আশ্রয় লইল। সুযোগ বুঝিয়া বিশ খানেক বিবিধ প্রকৃতির মাছের স্তূপের মাঝে নিজের সাত দিনের অলটার-ইগো গুঁজিয়া আসিল।

ওপর মহলে মাছ চুরি যাবার প্রতিক্রিয়া সে আন্দাজ করিয়াছিল। তাহার প্ল্যান ছিল, ব্রিঞ্জালের ল্যাব হইতে আসিয়া আবার উহা পুনর্স্থাপন করিবে। সে আর হইল কই। যাহা হউক, আপাতত সে মুক্ত। রিলিভড। অত্যাবশ্যক ও যুক্তিপূর্ণ চিন্তার স্তর হইতে স্কেলুলেটিভ ফ্যান্টাসি অভিমুখে কন্যা অলস অসাবধানী পদক্ষেপে পা বাড়াইলেন। ভাবিতে লাগিলেন, ইলিশটির কারেন্ট স্ট্যাটাস এখন কি হইতে পারে, হয়তো সে এখন একুয়ারিয়ামের ক্লোজড কেমিকাল-যুক্ত বন্ধ পরিবেশ ভুলিয়া নর্দমার প্রাকৃতিক দুর্গন্ধে এডাপ্ট করিবার প্রয়াস চালাইতেছে, হয়তো কোন বুভুক্ষু বিড়াল তাহার গায়ের ঘ্রাণ লইতেছে, শিকারের সুযোগ খুঁজিতেছে| সুনয়নার ওষ্ঠ-কোণে দুষ্টু-মিষ্টি হাসি খেলিল।

উপরি-উক্ত সকল চিন্তা স্পেকুলেশান ও কন্জেকচার নামাইতে সুনয়নার মিনিট পাঁচেকের অধিক লাগিল না। কারন সুনয়না, অ্যাস উই অল নো, ইজ আ ফাস্ট থিঙ্কার।


ইহার পর সুনয়না শায়িত অবস্থায় ঘাড় ঘুরাইয়া বেডরুমের দক্ষিণে অবস্থিত কাবার্ড মিররে দৃষ্টি রাখিল। যত না আপন সৌন্দর্যের প্রতি, তার অধিক আজিকার এডভেন্চার, ডেয়ারিং ও তার এই নবলব্ধ স্বাধীন-সত্তার প্রতি এক চটুল শ্রদ্ধার্ঘ্য স্বরুপ আপনাকে আপনি চোখ মারিলেন।

তক্ষুনি কল্পনার সেই বুভুক্ষ বিড়ালটির কথা তার মনে পড়ে গেল|
পা দোলাতে দোলাতে সুনয়না পুনরায় চোখ মারিলেন




আচু-ইলু সংবাদ


মধ্যরাত্রির কলিকাতার রাজপথে বিপিন চন্দ্র ত্রস্ত পদে একটি মাগাড়ে ইলিশ বগলে লইয়া যাইতেছেন। তাহার পশ্চাতে চার উদ্দাম বিড়াল।


কোথা হইতে ইহারা জেনারেট হইল কেহই জানে না। অদ্য রাত্রির অনেক ঘটনার মতই ইহাও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যলয়ের আধিভৌতিক বিভাগের সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত।


প্রথমে কালো হুলোটি ছিল, তাহার পর কোথা হইতে অবিকল আর একটি তাহার পিছ্নে খাড়া হইয়া পড়িল। তহার পর লাইনে আর এক, তাহার পিছু আরো একটি।
বিপিন ভাবিয়া পাইল না, ইহাদের হইতে নিস্তার কি করিয়া পাইবে।


অবশ্য তাহাকে বেশী দূর যাইতে হইল না। আনন্দপালিত মোড়ে কপু-র একটি ভ্যান তাহার পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইল। বিপিন চন্দ্র কে প্রাক্তন, নূতন কোন নকশাল ক্যাটিগরিতেই ফেলা মাওসেতুঙ্গের স্মৃতি সৌধের উপর মুত্রাঘাতের সামিল হইবে। তথাপি বিপিন বাবু রাষ্ট্রদ্রোহ ও মহামূল্যবান সরকারী সামগ্রী চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হইলেন।


সুনয়না চোখের লেন্স খুলিয়া একটি সিগারেট জ্বালাইল। সেই মুহুর্তে শহরের এক বিয়েবাড়িতে বিজলী গ্রিল বাফের ঠিক পিছনে একটি কালো ধোঁয়া বড়ই উচ্চাকাঙ্খী হইয়া উঠিল। বিয়ের জৌলুস, শব্দ ও জমক হইতে অনেক দূরে, খাবার ডাস্টবিনের ঠিক পাশে এই একটি মাত্র স্পট যেথায় আলোক স্পর্শ করে নাই। সত্যান্বেষী পাঠক, আমরা ট্রেলটি-কে অনুসরন করিব না, উহার গন্তব্য ও রুট তো জানা। আমরা নাহয় সোর্স-টি কে ধরি। সোর্স বলিতে ফুল হাতা নীল কোঁকড়ানো শার্ট থেকে বেরিয়ে আসা একটি ক্লান্ত শীর্ণ হাত । সুনয়না একটি বেন্সন হেজেস ধরিয়েছিলেন, হাতটির হাতে চারমিনার।


সেই নি:সঙ্গ নির্বিকার চার্মিনারকে সঙ্গ দিছিল টিম টিম করে জ্বলা এক বিড়ি। বিড়ি পানকারীর হাতটি বাই কন্ট্রাস্ট, শক্ত ও মাংসল। বিড়ি ও চার্মিনার চাপা কন্ঠে কিছু আলোচনা করিতেছিল। গলার ওঠানামা, কাশির ধরণ ও গোপনীয়তার বাতাবরন দেখে ঠাহর হয় আলোচনার বিষয় বড় সাঙ্ঘাতিক। বাঙালীর ইতিহাসে শেষ এ প্রকার আলোচনা হইয়াছিল ২২ শে জুন, ১৭৫৭ মুর্শিদাবাদে জগৎ শেঠের গৃহে। অনেকে আবার দ্বিমত পোষণ করিয়া আমাদের হিপ্নোসিস সিনে ডা: হাজরা আর মন্দার বোসের স্মরণ করাইবেন। সে যাহাই হউক, দুই ষড়যন্ত্রকারী পরিত্যক্ত আবর্জনার পাশে মুদু স্বরে বাক্যালাপ করিতেছিল। দুষ্ট (অথবা রিফর্মড) মাকুদের মতে, আস্তাকুঁড় টি ইতিহাসের।


না চেনার মধ্যেই চার্মিনার কে চেনা। তাই ও নিয়ে আর একটি বাক্য নয়। বিড়ির ক্ষেত্রে অবশ্য অত সাবধানতা অবলম্বন করার কোন কারণ দেখি না। পাঠকের সুবিধার্থে বলা থাকুক, ইনিই হলেন প্রথম সিনের মোল্লা ফকিরুদ্দিন। ইনিই আবার কাপালিক আচার্য। অবশ্য এ তো মাত্র দু'টো হল। দেশ-বিদেশের শত্রু-মিত্র এনাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চেনে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঘৃণ্য দালাল সি-আই-এর কাছে যিনি boozy the red, তিনিই আবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড-এর son of joe । ইন্টারপোলের আর্কাইভে ওর ফাইলের শিরোনামে 'দ্য ফিশারম্যান' নাম টি পাওয়া যাবে। আধা-সামন্ততান্ত্রিক উপমহাদেশের গোয়েন্দা-সংস্থা, র ও আই-এস-আই এর কাছে,অবিশ্যি উনি একটি শর্ট, সিম্পল, ও কিউট নামেই বেশী পরিচিত।

আচু- এক্রোনিম ফর 'আসলি চুতিয়া'। আমরা যথাসম্ভব এই নামটিই ব্যবহার করব।

ইলুদা বলিতেছিলেন:

-'হোয়াট ওয়াস দ্যাট অল এবাঊট! মোল্লা ফক্রুদ্দিন, মাই ফুট! ঐ বিভৎস ডিসগাইসে তোমাকে কি ঘ্যাস্টলি লাগিতেছিল তুমি জান? এন্ড দ্যাট বিয়ার্ড! অগ্নীশ্বর-এ উত্তম কুমারের পাকা চুলের থেকেও জালি মাল। যে কেউ তোমায় চিনতে পারত'

-'কিন্তু পেরেছে কি?

-'শোন, ছদ্মবেশের জগতে তুমি হলে শাহরুখ। যাই কর না কেন, সব্বাই বুঝে যায় ওটা তুমি।'

-'কিন্তু ইলু দা , শাহরুখের মত পাব্লিক সব কিছুর মধ্যে আমাকেই চায়, এই এঙ্গল টা ভেবে দেখেছেন?'

-'দেখ আচু তুমি ভাল বক্তা, ভাল লিখিয়ে, দেয়ার আর রিসনস হোয়াই ইউ আর হোয়ার উ আর। তা বলিয়া বেশী ঘ্যাম লইবার স্কোপ নাই। আমরা বিপ্লবী চাই, শো-ম্যান নয়, অলিপাবে অল দ্যাট বুলশিট অন আফগান পার্টি এন্ড দোজ ক্রেজি স্পেশাল এফেক্টস। ওগুলোর প্রয়োজন ছিল কি? তুমি সবসময় এত বাড়াবাড়ি কর কেন বলত?'

বকা খেয়ে আচুর গলা একটু আর্দ্র।

-'ইলুদা, চেয়ারম্যান বলেছিলেন, বিপ্লব মানেই বাড়াবাড়ি।'

-'আচু , রেভোলিউশান রুদ্রপ্রসাদের নাটক নয়, বিপিনের স্কাইপ নয়, রঙ্গলালের কবিতা নয়, ইট ইজ...' এবার দুজনেই একসাথে, মাথা নিচু করে... 'এন এক্ট ওফ ভায়োলেন্স বাই উইচ ওয়ান ক্লাস ওভার থ্রোস এনাদার।'

এক মিনিটের নীরবতা। ইলুদা যেটা ভাঙলেন।

-' আমাদের আগেই পুলিশ বিপিনের কাছে পৌঁছে গেল কি করে, সেটাই ভাবছি।' 'মাছ কনফিস্কেটেড?'

-'উইথ অল হিজ পোজেশান্স'

-'কিন্তু এখনো থানা থেকে কোন খবর আসেনি। সেটাই ভাবছি। ওয়ান ওয়ে ওর দি আদার সাম্থিং ইজ রঙ। তোমার মাছ পুলিশের হাতে পড়লে আমাদের প্লান বানচাল। অন্যদিকে পরীক্ষাগারে মাছ এর ই-আই ধরা পড়লে সে ক্ষেত্রে নগরপাল আমাদের বলে সাবধান করে দিত। অন্ধ্র থেকে রেড করিডোর বেয়ে যে নতুন রুই এর শিপমেন্টটা আসছে, ওটাও গাঁড়ে যেত।

'তার মানে হয়তো আসল মাছটা বিপিনের কাছে নেই, উইচ ক্যান ওনলি মিন-ইউ, উইথ অল ইয়োর রেটোরিক এস কাপালিক আচার্যি গট ক্যারিড এওয়ে এন্ড বাঙ্গলড আপ। যদি মাছটা বদলে গিয়ে থাকে!'


- 'উফফ! পুলিশের ক্যাচাল টা না হলে আমরা এতক্ষণে বিপিন কে মনিটর করতে পারতাম!'

- 'তুমি শিওর ও সিয়া?

-'হান্ড্রেড পারসেন্ট'

-'শোনো এখন কিছুদিন যাস্ট ট্রাই টু মেনটেন আ লো প্রোফাইল। টিল উই লোকেট দ্য ট্র্যাকার-ফিশ। জানি এটা তোমার কাছে খুব শক্ত ব্যাপার।'

-'ইলু দা একটা কথা বলব?

-'বল।'

- 'আমার এই হাই প্রোফাইলগুলি আছে বলেই তো কেউ আপনার আর আমার লোয়েস্ট প্রোফাইলটিকে সন্দেহ করে না, ওয়েল আক্ষরিক অর্থে হাইয়েস্ট, হি হি'

-'ইউ মিন... খ্যাক খ্যাক।'

-'খিক খিক'

-'খুকুশ খুকুশ খুক' ( কাশি ও হাসি মিশ্রিত এক অপার্থিব ধ্বনি)


হাসিতে হসিতে দুজনেই ঊর্ধ্বপানে চাহিয়া দুটি ভিন্ন সাইজের স্মোক- রিং ছাড়িল। ছোট চাকা কিছুটা পথ বড় চাকাকে চালাইয়া লইয়া গেল, তাহার পর দুটি চাকাই ডায়ামিটার বরাবর ইন্টার্সেক্ট করিল, এবং যাত্রাপথ রিসিউম করিল।


গন্তব্য ছিল আকাশ




দুর্গেশনন্দিনী


বিপিনের স্পেশাল সেল হইতে দশ ধাপ সঁিড়ি উঠে মেজানাইন ফ্লোরে নগরপালের বাসস্থান। দুটি লাগোয়া কক্ষ। বড় কক্ষটি সার্ভেলান্স ক্যামেরা, প্লেগ ফিল্টার, পার্সোনাল-এবিউস অটো-ডিস্ক্রিশান প্রভৃতি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি শোভিত। দুই দ্বারপাল বাহিরে অষ্টপ্রহর পাহারায় নিযুক্ত। ছোটো কক্ষটি সরঞ্জামহীন, অনাড়ম্বর, পরিপাটি। সেই ঘরের মেঝেতে মাদুর পাতিয়া, বালিশে আধশোয়া হইয়া রিডিং ল্যাম্প জ্বালাইয়া শ্যামা তৎকালে গভীর মনোনিবেশে নভেল পড়িতেছিল।


পাঠকের সহিত এই নারীর সাক্ষাৎ প্রথমবার, তাই আসুন তাহাকে ভাল করিয়া নিরীক্ষণ করি। শ্যামা নগরপাল-কন্যা। মুখাবয়ব দেখিলে তাহাকে অপাপবিদ্ধ কিশোরী বলিয়া ভ্রম হয়। এক্ষণে সে বাম হস্তের উপর কপোল রাখিয়াছে। তাহার আয়ত নয়নের দৃষ্টি বইয়ের পাতায় স্থির সন্নিবদ্ধ, চোখের মণি ক্ষিপ্রগতিতে অক্ষরগুলির উপর ভ্রাম্যমাণ। শ্বাস দ্রুত পড়িতেছে। ওষ্ঠাধরে পর্যায়ক্রমে অপ্রত্যাশার বিস্ময় ও নিবিড় পরিচিতির অভিব্যক্তি ফুটিয়া উঠিতেছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে এক বিরক্তিকর একটানা খুট খুট শব্দ হইতেছে, কিন্তু শ্যামার কোনোদিকে ভ্রূক্ষেপ নাই। এমন উপন্যাস সে আগে পড়ে নাই। ঔপন্যাসিক প্রতি বিজোড়-সংখ্যক পরিচ্ছেদে পাঠকের মনের অন্তঃস্থলটুকু পড়িয়া লইয়া আবার তাহা পাঠককেই উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করিয়া শুনাইয়াছেন। এবং জোড়-সংখ্যক পরিচ্ছেদে পাঠকেরই পরামর্শ মোতাবেক একটি করিয়া নতুন চরিত্রের সৃষ্টি করিয়াছেন। বিস্ময়াভিভূত শ্যামার গাত্রে গুসবাম্পস হইতে লাগিল, মনে হইতে লাগিল এমন ডাইনামিক্স সে ইতিপূর্বে কোনো নভেলিস্টের সহিত ফীল করে নাই। এ যেন তাহার মনের প্রতিটি চাওয়া নিংড়াইয়া শব্দের মোহিনী জাল বুনিয়াছে।



কলিং বেল বাজিল। চাইনিজ টেকঅ্যাওয়ে হইতে ডেলিভারি বয় আসিয়াছে স্পেশাল সেলের বন্দীর নৈশাহার লইয়া। পাঠে বাধা পড়াতে শ্যামার ভ্রূকুঞ্চিত হইল। মনে পড়িল, আজকের ডিনার বন্দীকে পৌঁছানোর দায়িত্ব তাহার স্কন্ধে।
সঁিড়ি দিয়া নামিয়া কন্যা বিপিনের সেলাভিমুখে চলিল। নেপথ্যের খুট খুট শব্দটি বাড়িতেছে। বুঝিবা শ্যামার পদশব্দ পাইয়াই, বুঝিবা নিছক সমাপতন-- বেসমেন্টের সলিটারি সেলে বন্দী জনৈক পাগলের উদাত্ত দরদিয়া কন্ঠ শুনা গেল,


'কেন তারে ধরিবারে করি পণ অকারণ, মায়াবনবিহারিণী হরিণী'।


শ্যামার চোখের কোণে দুটি ভাঁজ পড়িল, মুখে চকিত হাসি খেলিয়া গেল। পাগলের ঘুম নাই, সে সদাজাগরূক। বিমর্ষর দুই দ্বারপালের অন্যতম, রিফর্মড কমি পর্ণদাস, আসিয়া তালা খুলিয়া দিল, শ্যামা বিপিনের কক্ষে প্রবেশ করিল। এক্ষণে সে একটানা শব্দটির উৎস অনুধাবন করিতে পারিল। বন্দী টেবিলের উপর কুঁজো হইয়া ঝুঁকিয়া পড়িয়া এক অতিকায় কীবোর্ডে টাইপ করিতেছে। সেই সিগনালে শয্যার পার্শ্বে দন্ডায়মান রোবোটাকার প্রসেসরে লাল নীল আলো জ্বলিতেছে, সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ালের উপর প্রজেক্টেড মায়াবী সবুজ আলোয় উদ্ভাসিত জায়ান্ট স্ক্রীনে ডেনিম জ্যাকেট পরিহিত রাতজাগা-লাল-চোখো-উস্কোখুস্কো-চুলের একটি লোক মুখব্যাদান করিয়া নানারূপ অঙ্গভঙ্গি করিতেছে। শ্যামার চোখ বিস্ফারিত হইয়া উঠিল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিশোরীর নুপূরের রিনিঝিনি তুলিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, 'ও কি? ও কি লিখছেন? আপনি লেখক?'



নারীকন্ঠ শুনিবামাত্র বিপিন চন্দ্র ধরমরিয়া উঠিল। ফিরিয়া দেখিল নওলকিশোরী, এক হস্তে ল্যাম্প অপর হস্তে চিকেন চাউমিন। ইন্সট্যান্ট ইম্পাল্্সে মাথাটা তাহার ঘুরিয়া গেল, চিন্তাসূত্র ছঁিড়িয়া পড়িল। মুহূর্তের মধ্যে ঘড় ঘড় শব্দ করিয়া প্রসেসর স্তব্ধ হইল, স্ক্রীনের দৃশ্যাবলী ফ্রীজ শটের ন্যায় মধ্যপথে থামিয়া গেল। মোহাবিষ্টের ন্যায় বিপিন বলিল, 'আমি..
আমি..মানে পপার.. মানে আমি ফিলসফার! আমি ফিলসফার! লেখাই আমার নেশা। তুমি পড়িবে? আমার পিডিএফ?'


নীচের ফ্লোরে একাকী পাগল ততক্ষণে গান ধরিয়াছে-

'ইস অঞ্জুমন মে আপকো আনা হ্যায় বার বার
দীওয়ারো দর কো গউর সে পহেচান লিজিয়ে'।





অতিথি


বিপিন অপেক্ষা করছিল। রাত জেগে, সেলের গরাদে হাত রেখে। সকাল সকাল নগরপাল বিমর্ষ বাবু নিজে এসে তাকে জানিয়েছিলেন, তার ডিফেন্স লইয়ার যোগাড় হয়ে গেছে। অপেক্ষারত বিপিন খানিকটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। সেলের বাইরে বূটের শব্দে সেটি ভাঙল।


বিপিনের সেলাভ্যন্তরে আমরা গতকল্য সন্ধ্যায় একবার এসেছি, পাঠক। এবার দিনের আলোয় ভাল করিয়া পুনরায় দেখা যাক। ২০১১ পরবর্তী যুগে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক বন্দীদের চাপ সামলাতে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে একটি নতুন এক্সটেনশান তৈরী হয় । তারই সাউথ মোস্ট কর্নারে বিপিন বাবুর বর্তমান ঘর-বাড়ী। বারো ফুট বাই বারো ফুট একটি সেল। এই ফ্লোরে এটিই সবচেয়ে বড় কামরা। সেখান থেকে ফ্লোরের উত্তর পর্যন্ত একটি প্রশস্ত করিডোর। করিডোরের দুই পাশে প্রায় ৩০ খানেক ক্ষুদ্র সেলে হাজার খানেক কমি ইঁদুর বন্দী। করিডোর যেখানে শেষ , সেখান থেকে একটা ছোট স্টেয়ার-ওয়েল ঊঠে গেছে মেন গেট অবধি। গেট এর উপর পর্দা। পর্দার উপর ভাগে উত্তরের দেয়াল - সিলিং এর মিড-পয়েন্ট একটি ওভাল শেপের প্রোজেক্টার। এই মুহুর্তেত প্রোজেক্টারের মুখ থেকে স্টেয়ার ওয়েল বেয়ে, করিডোরের ঠিক মাঝখান দিয়ে বিপিনের সেল অবধি একটি গাঢ় সবুজ রঙ্গের কার্পেট বিছানো হয়েছে। অতিথি এলেই এরকম হয়। এই মায়াবী পর্দা আসলে একটি লেসার বিম। তবে এ আয়োজন শুধু অতিথি খাতিরে নয়।


দিনভর কমি ইঁদুরদের অনর্গল কিচির মিচির, ও সেল টু সেল থুতু ছোঁড়াছুড়ির প্রতিযোগিতায় ফ্লোরের বাতাসে প্লেগ ভাইরাসের প্রাবল্য । বাইরে থেকে লোক আসলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। ইস্ট জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির অপটিক্স বিভাগের উদ্ভাবন এই লেসারটির সান্নিধ্যে ভাইরাস সার্ভাইভ করতে পারে না। তীব্র সবুজ আলো একটি এন্টি-কমি-প্লেগ বর্ম নির্মাণ করে দেয়, যার ভেতর দিয়ে অতিথি সুরক্ষিত ভাবে করিডোর বরাবর আসা যাওয়া করতে পারে।

অবশ্য এতে একটি সমস্যা আছে। মনুষ্য-রেটিনার সবুজ আলো সহ্য করার থ্রেশহোল্ড আছে। সেন্ট্রাল জেলের প্রোজেক্টারের তীব্রতা তার থেকে ১৫ গুন বেশী। এই বিপদ এড়াতে অতিথিদের একটি স্পেশাল কালো চশমা পরিয়ে দেওয়া হয় । আজকের অতিথির চোখেও তাই একটি কালো চশমা।
পরনে নীল ফ্লিস জ্যাকেট, কানে হেডফোন।


বিপিনের মানসচক্ষে শৈশবে পড়া ছোটদের বাইবেলে আলোর ঢেউয়ে নেমে আসা হালেলুইয়া গীত-রত দেবদূত দের কথা মনে পড়ে গেল। ওদিকে কিচির্মিচির বন্ধ। অতিথি দর্শন মাত্রই কমি ইঁদুররা যে যার গর্তে সেধিয়ে গেছে। অতিথি দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে, অথচ সেলের বাসিন্দাদের মনে হল স্লো মোশান। কবির ফোর্কাস্ট অনুযয়ী ঠিক এভাবেই 'লাস্ট সিনে ফিরিবে দিওয়ানা' । কিন্তু বাস্তবে ফিল্মের মত ব্যকগ্রাউন্ড বাজে না। যদি বাজত তাহলে অতিথির গেটআপ, ঘ্যাম, ও চশমার সাথে মানানসই কিছু ঝিন্চ্যাক শুনতে পেতাম। তার বদলে শোনা গেল, পূর্ববর্ণিত সলিটারি দরদিয়ার কন্ঠ। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশের ফ্রাস্টু-সমাজে এই গানটি জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছিল।

'সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে!'

বাস্তবের ডানা কাটা দেবদূত এখন সেলের ঠিক সামনে। কার্পেট গুটিয়ে নেয়া হলে আগন্তুক চশমা খুলল। সবুজ আলো নিভল।

'এসসসস-সে গেছি'-- অতিথির ঘোষণা।
বিপিন তখনো সন্দিহান।

- 'বিপিন চন্দ্র?'

- 'হ্যাঁ'

-'আপনার কেসের প্রসিকিউটর সুনয়না সেন তো?' একটি ইঙ্গিতপূর্ন হাসি হেসে চোখ টিপল অতিথি।

-'হ্যাঁ কিন্তু..'

- 'আর কোন কিন্তু ফিন্তু না। রিলাক্স। আমি যখন এসে গেছি, ইউ ক্যান কনসিডার ইয়োরসেল্ফ'...

এইটুকু বলেই অতিথি চুড়ান্ত এলিগেন্টলি ব্যাকফুটে গিয়ে একটি কাল্পনিক ব্যাট দ্বারা একটি কাল্পনিক বলের প্রতিরোধ করে দেখালেন। জেলের নীরবতা ভেঙ্গে একটি ক্লিক শব্দ হল।

...'ডিফেন্ডেড!'

অতিথি তার বাক্য শেষ করলেন। বিপিন সভয়ে সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলেন, অতিথির থুতনিতে দুটি পাকা বাল।

(ক্রমশঃ...)



Sunday, January 10, 2010

চোষলিমা ও আমি: একটি জি-টক কথোপকথন

আমি: 'এই চোসলিমা, কাম টু জি টক'

চোসলিমা: 'জি
কি, নতুন ছক?'

আমি: 'ইয়ে,বিশেষ দরকার।'

চোসলিমা: ' যা বলার দাও সংক্ষিপ্তসার'।

আমি: 'কমিউনিজমের মারিব গাড়'

চোসলিমা: 'আবার? ওর্কুট-রতি কি হল না শেষ
মরমে পষিল না মামনির শ্লেষ,
ছিড়িবার জন্য কোথা তব কেশ?'

আমি: 'জানই তো, লং-ড্রন প্রসেস'

চোসলিমা: 'হুম, এতদিন একাই বিধিলে বাম,
মোর তরে তখন ছিল না কাম ;(
কি ব্যাপার, আজ থ্রি-সাম?;)
দেখ আজিকে যতই সাজ না চাম
অদ্যাবধি
নারীবাদী স্পেক্ট্রাম কে যদি ধরি নদী
তার এক প্রান্তে আমি, আর এক প্রান্তে তুমি
মাঝে বহি যায়, ক্লোসেট বন্দী কত পোমো,
গন্তব্য তাত্ত্বিক নো-ম্যান ভূমি'

আমি: 'না না বলছি এবারে লিখবে শুধু তুমি
কমিরা তোমায় তাড়াল
গ্রাজ তো আছেই ভাল?
না কি?

উঠাইতে চাহ স্যন্ডাল,
তা না করে লেখ
দু বাংলার কমি দের স্খ্যন্ডাল
এখানে নেই কোনো কিন্তু
মহিলা সমিতির নেত্রীর সাথে ইন্টু-মিন্টু থেকে
প্রথ্ম আলাপে তাদের দৃষ্টিতে ভোগ
লেনিনের যেমন ছিল সিফিলিস রোগ
তেমনি তাদের দিও গণ-রিয়া
এর জন্য তোমায় পুরষ্কিবে সিয়া'


চোসলিমা: 'কিন্ত্ এসকলি তো মিথ্যে, কল্পনা'

আমি: 'সাহিত্য জানিবে এক ফোলা গরম সোয়েটার
গুল দিয়ে বোনা'

চোসলিমা: 'তুমি, তুমি একটা দুষ্টু সোনা'

আমি: 'বাহ, তাহলে সে কথায় রইল'

চোসলিমা: 'দাড়ান,আজ মোর বিবেক যা সইল
তার দাম চাই, দেবেন আশা করি
আপনি মানুষটা যতই লো '

আমি: 'তোমার ঠোট খুব পুরু
তোমার প্লাক করা ভুরু
যেন শেষেরো শুরু
যেন রণে বনে গুরু'

চোসলিমা: 'প্লিজ, ঐ টি কর্বেন না?

আমি: 'কোন টি?'


চোসলিমা: 'ফ্লার্ট'

আমি: ' না করলে দেখেছি
মেয়েরা হার্ট হয়'

চোসলিমা: 'তাইলে শুনুন
আপনার ফ্লার্ট যেন
দুম করে ফার্ট যেন
কুড়ি বছর এন-আর আই এর
'রোল' কে 'পার্ট' যেন
বাংলা মিডিয়ম ছেলের জি-আর-ই ঠাট
আর
এটিকেট ডিনারে লাগা সেই হাত আর
কাস্তিঁং কাউচে শক্তির আর্ট যেন
বড়লোকি চাল তবু পরনে ওয়াল্মার্ট, আর'

আমি: 'থাক, স্টিল উ রিমেন মাই আপেল টার্ট।'

চোসলিমা: 'ধুর বাল'

আমি: 'শোনই না, এভ্রিথিং হ্যাজ ইটস ইউস'
বাই দ্য ভার্চু ওফ ইওর ঘৃনা আই'ল বি ইওর মিউজ'

চোসলিমা: 'গুড নিউজ বাট হাউ'

আমি: ' ইজি,য্ত কমির ছবি আছে তোমার কাছে
তারে কর মর্ফ ফোটো-শপ টাচে
ওদের মুখ কেটে বসিয়ে দাও মোর থোবড়া
সেই প্রথ্ম যবে দেখিনু স্প্রিঙ কোবরা
মুখ দেখে বলিবে মনে, মারি এক ব্লো
আপনা সেই গতি নিবে নভেলের ফ্লো'


চোসলিমা: 'দারুন, আর এক আইডিয়া মারিল কিক
এই নিয়ে কার্টুন বানাক অভীক'


আমি: 'খাসা খাসা, শুধু একটি হতাশা করিছে ভর
টেলিগ্রাফ সম উঠিবে না ঝড়'

চোসলিমা: 'ওহে নটবর কবে আর বুঝিবে
নারীর যন্ত্রণা, সেক্সুয়াল স্টিরিওটায়িপ
খালি স্কাইপ স্কাইপ,বিপুল তুমি দেখনি লাইফ'

আমি: 'ধুস, ওসব হাইপ, আমিও সংখ্যালঘু'

চোসলিমা: 'এ কি কথা শুনি, রঘু
কভু ভাবিনি তোমারো তরে সাথী
জাগিবে সিম্পাথি।'


আমি: 'অবশেষে জাগিল? কতবার যাস্ট কতবার
হৃদয় চেয়েছি, শুনেছ দিল দো
তোমাকেই ভজে রাইটার্স গিল্ড ও

তুমি হয়ে যাও হট
আর আমি?

মারি থার্ড লেগে শট
আর খিস্তি ফিল্ড ও'


চোসলিমা: 'কিন্ত কি তোমার সমস্যা,কোথা অধিষ্ঠান?'

আমি: 'ইহা নিশ্চয় জানিবে
আতেঁল বাতেলায় পাতিলে কান
ব্রেন ইজ দ্য হাইয়েস্ট সেক্সুআল অর্গান'

চোসলিমা: 'হ্যাঁ সেরমি তো শুনি, মানি সে কথা'

আমি: 'তাহলে বুঝিবে আমার এ ব্যথা
না, করেনি কেউ মোর পৌরুষে হ্যাটা,
যদি বল ম্যান গো
এখুনি চলে যাব তোমার সাথে প্যারিস
নাচিতে ট্যঙ্গো।
দেখিতে কার্তিক, তবু উইকি মারা তাত্ত্বিক ওগো
আমি বিকলাঙ্গ'

Saturday, December 5, 2009

তিন কন্যা-পর্ব ১

চরিত্র-তালিকা

১) বিপিন চন্দ্র
২) প্রিস্টিন পাল (F)
৩) রঙ্গলাল

৪) সুনয়না সেন (F)

৫) লিমারিক বসু (F)

৬) কাপালিক শ্রী শ্রী তর্কালঙ্কার আচার্য্য

৭) এক্সট্রা:- সিপিএম ক্যডার, ঘেটো ক্রাউড, মশা

৮) ভেস্ট এপিয়ারেন্স:- দুর্যোধন

স্থান: ডিসি, নিঊ জার্সি, কলিকাতা।




পূর্বকথা


কলেজে থাকতে এই স্বপ্নটি প্রায়ই দেখত সে।


একটি বিস্তীর্ণ প্রান্তর। সেখনে অনেক অনেক কাগজ। কাগজের চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে বিপিন। প্রথমে ডলার ভেবে হাতে নিয়ে উড়িয়ে দেখেছিল, কিন্তু না। সব কটা কাগজে একটাই ছাপ মারা 'acrobat reader 9' । সামনের বেদীতে বসে ওটা, ওটা কে? ক্লাসমেট কিংশুক না? কিন্তু ও কি, ওর হাতে গদা কেন? থাইয়ে ব্যান্ডেজই বা কিসের? ক্রমাগত পিং পিং ধ্বনি হয়েই চলেছে। পি ডি- এফ সমুদ্রে ডুবতে ডুবতে বিপিন দেখল প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু কাঠের চেয়ারে ল্যাপটপ বসানো। সেখানে অবিরত চ্যাট-এর মেসেজ আসছে। কিন্তু আজ কোনটারই উত্তর দিতে পারবে না। অসহায় ভাবে একটা হাত বাড়িয়ে দিল বন্ধুর দিকে বিপিন।
'আমার, আমার কি হইবে?'


দুর্যোধন-রূপী বন্ধু অঙ্গুলি নির্দেশ করিল বেদীর নিচের দিকে। তথায় এক বৃহদাকার অজগর সর্প আপনি-আপ'কে গিলিয়া খাইতেছে। বিপিন এর মনে পড়িল এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় এই বিষয়ের উপর সে অনেক আঁক কষিয়াছে। 'কনান্ড্রাম' শব্দ টি তখন থেকেই জানা । কিন্তু ইহার সাথে তাহার জীবনের কি সম্পর্ক?


সভয়ে প্রশ্ন করিল 'মিন করিতেছেন, কি আমার অতীত আমাকে গ্রাস করিবে? তাহলে কি ইহাই মানিয়া লইব মানুষ ডেস্টিনির শিকার, সে তাহার ললাটলিখন এড়াইতে পারে না, কিন্তু মিলের পজিটিভ লিবার্টি গ্রন্থে আছে, সাবজেক্টিভ উইল-পাওয়ার...'


- 'ওসব ভাট ওর্কুটে দিস। আই হ্যাভ ওনলি ট্যু ওয়ার্ডস ফর ইউ। এন্ড দ্যট ট্যু ইন স্যনস্কৃট। আত্মলিঙ্গম পোঁদেপুরম!'


এবার বিপিন রীতিমত সন্ত্রস্ত। তাহার প্যানিক-স্ট্রিকেন ও ঊর্বর মস্তিষ্কে গ্রীক, রোমান, সেক্সপীয়ার ও পুরানের ট্র্যাজিক নায়কদের বায়ো-ডাটাবেসে এক রান্ডম সার্চ এলগোরিথম লাগাইয়া দিল।

- 'আমি কি পিতাকে হত্যা করিয়া মাতাকে বিবাহ করিব? আমি কি বস কে খুন করিয়া, তাহার পদ ছিনিয়া লইব? আমি কি...'

- ' পিতা দূরস্থান, এই ইহজন্মে একটি সময় আসিবে যখন মশক হত্যা করিতে তোমার হাত কাপিবে। তোমার মৃত্যুর কারণ হইবে তোমার অগাধ লিপ্সা ও ততোধিক গবেটপনা।
হ্যা, আর একটি কথা, তোমার এই বিবিধসম্ভাবনাখচিত বর্ণময় জীবনের যাত্রাপথে, এক পুরুষের সহিত সাক্ষাৎ হইবে। যাহার চিন-এ দুটি পক্ক কেশ-রাশি পাইবে। এমনিতে বোঝা কঠিন, নিকটে গেলে দেখিতে পাইবে। উহার হইতে সেফ ডিস্টেন্স মেনটেন করিও। নচেত পস্তাইবে।'

ঘাম দিয়ে ঘুম ভাঙত বিপিনের।


পোস্টমাস্টার

(১)

'হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল'
----প্রাচীন প্রবাদ


২০০৯। ওয়াশিংটন ডিসি। স্থান: ন্যাশনাল জুওলজিকাল পার্ক। ইউনিভার্সিটি ওফ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান ডিয়েগো'র ইভোল্যুশনরি বায়োলজির হেড ওফ দ্য ডিপার্টমেন্ট, প্রফেসর বিপিন চন্দ্র তার এক স্পেশাল সায়েন্টিফিক টিম লইয়া এক মাস হইল ডিসি আসিয়াছেন। কিছু কাজ, কিছু ভ্রমণে দিন গুলো ভালই কাটিয়াছে । অদ্য শেষ দিবস।


প্রত্যেক রবিবার বিপিন এখানে টহল দিতে আসেন। উদ্দেশ্য, হাওয়া-সেবন ও ইতি-উতি ফটোগ্রাফি। পেশার কারনেই পশুপক্ষীর জগত উহাকে প্রবল ভাবে টানে। আজ বিশ্ব পশু দিবস উপলক্ষ্যে বেশ কিছু ট্যুরিস্টও জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এক স্টুডেন্ট বৈজ্ঞানিক টিম পার্কে ভিড় করিয়াছে। হাতি গন্ডার জিরাফ ইত্যদির ছবি তুলিতেছে। বিপিন টিম'টির সাথে ভিড়িয়া গেল।



এখন উহারা একটি বৃহদাকার হস্তীর সম্মুখে। কঙ্গো হইতে ইম্পোর্টেড এই হস্তীটির অস্বাভাবিক মেমরি হেতু কিছু স্পেশাল বিহেভরিয়াল প্রপার্টি আছে, যাহা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ ব্যবহৃত হইতে পারে। একটি গাইড তাহা ব্যাখ্যা করিতে শুরু করিল। এই অদ্ভুত প্রাণিটির দর্শনলোভে বেশ কিছু ট্যুরিস্টও পিছু পিছু আসিল।


ঠিক এই সময়ে বিপিন অদ্ভুত ব্যাপারটি খেয়াল করিল। একজন, হ্যাঁ শুধু একজন হাতিটিকে দেখিতেছে না। ঐ দিকে উহার কোন ভ্রক্ষেপই নাই। বরং আধা-উদ্ভ্রান্ত আধ-প্যানিকি হইয়া হাতির পদতলে, ঘাসের ঊপর কিছু একটা খুঁজিবার প্রয়াস করিতেছে। বিপিন-এর মনে পড়িয়া গেল, আগের সপ্তাহে এই মহোদয়াই তুরস্ক হইতে ইম্পোর্টেড ঘোড়ার লেজ-প্রান্তে বা তাহার আরো নীচে কি এক গভীর অনুসন্ধান চালাইতেছিল, রূপবান অশ্বটিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করিয়া।


এইবার আরো অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটিল। হাতিটি অনেক বিবেচনা করিয়া, অত্যন্ত শ্লথ গতিতে, একটি কেয়ার্ফুল স্টেপ লইবার মনস্থির করিল। এবং একটি পা অগ্রসর হইল। সেই মুহূর্তেই ট্যুরিস্ট টিমকে পিলে চমকইয়া দিয়া আমাদের এই অনামিকা মহোদয়া এক লম্ফ দিয়া হস্তীর পদতলে ঝাঁপাইয়া পড়িল ও শ্রীলক্ষ্মী যেমন সমুদ্রগহ্বর হইতে করপুটে সযত্নে অমৃত ভান্ডার উদ্ধার করিয়া সার্ফেসে ঊঠিয়া আসেন, অনুরুপ বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ ও এলিগেন্স সহ কিছু একটা তুলিয়া আনিল... তাহার হাত দ্বিধাথরোথরো, তাহার চোখে আধো সন্ত্রাস ও আধো যুদ্ধজয়ের উল্লাস, কন্ঠে কৈশোরের অস্থিরতা। বিপিন বাবুর উদ্দেশ্যে, না স্বগতোক্তি ঠিক বুঝা গেল না, কিন্তু কন্ঠ-সুধার অনিবর্চনীয় কোয়লিটি তে যাহা খাড়া হইয়া উঠিল, তাহা হইল বিপিন বাবুর কর্ণ।

-'বাব্বা আর একটু হলেই পিষে যাচ্ছিল'
-'কি? '
অনামিকা হাত খুলিল। বিপিন দেখিল একটি ক্ষুদ্র মশা। ৭০-৮০র দশকে উত্তর কলকাতায় বহু লোডশেডিং-ঘন যামিনী যাপনকারী বিপিন চন্দ্রের কন্ডিশনাল রিফ্লেক্স তাহাকে বাধ্য করিল হত্যাকারির হস্ত উদ্যত করিতে। কিন্তু আঘাত আসিল না। বায়ুপথেই তাহা থামিয়া গেল, বিপিন দেখিল তাহার জামার আস্তিনে অনামিকার হাত।

-'এ কি করছেন?' অনামিকার চোখে হরিণশিশু-রেস্কু-কালে-শকুন্তলা'র তিরস্কার ও ভয়।
-'না, এটা তো মানে জাস্ট একটা মশা'।
-'জাস্ট মশা!'
-'মানে এ তো সামান্য....'
-'সামান্য!'
কিছুক্ষন দুজনেই চুপ। বিপিনেরো হাত কাঁপিতেছে। স্বপ্নে বন্ধুর ভবিষ্যবাণী স্মরণে এল।
-'আপনাকে আমি আগেও দেখেছি।'
-'হ্যা আমি প্রত্যেক রোব্বার আসি। এদের জন্যই আসি।'
-'আমেজিং! আপনি হাতি ঘোড়া না দেখে মশা বাঁচাতে আসেন?'
-'মশা দের নাহলে দেখবে কে? হাতি ঘোড়া সবল প্রানী , তবু এদের যত্নআত্তিরে কত লোক, কত আয়োজন , বেচারী মশাদের কে আছে বলুন। এই
জ়ালিম দুনিয়ায়, হাতি ঘোড়া গন্ডার বাঘ সিংহ মানুষ, মশাদের প্রতিনিয়ত পিষে যাছে, ওরা দুর্বল বলেই না। শুধু এখানে নয়, ভারতে লাটিন আমেরিকায়, মধ্যপ্রাচ্যে। আমি লিঙ্ক দিয়ে দেখাতে পারি দিনে কত মশা মার খাচ্ছে, সারা পৃথিবী জুড়ে।'

-'কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক মানে বিবর্তন । মানে 'সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট' মানে এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম'
-'সবি বুঝলাম', তারপরেই সীমাবদ্ধ সিনেমার নায়িকা টুটুল-এর মত একটি অ্যাকিউট এঙ্গেলে ঘাড় বেকিয়ে চোখ বড় বড় করে আবার আবার সেই খনিকটা নিজেকে খানিকটা অন্যকে বলার কনফিউশন তৈরি করে এবং সেই একি কন্ঠ-সুধা ঢেলে 'কিন্তু এটা ভাল না খারাপ ?'

এর উত্তর কি বিপিন বাবুর জানা ছিল ন। এথিক্সে যার বিশাল পড়াশোনার ব্যাপ্তি। হেগেলিয়ন মরালিটি হইতে নিয়েৎসের অ্যামরাল লজিক যাহার নখদর্পণে। কিন্তু সেই মুহুর্তে বিপিন বাবু উত্তর দিতে একপ্রকার অক্ষমতা বোধ করিলেন।

কারণ ইতিমধ্যে, ঐ গ্রীবা টার্নিং এর যাদুময় ম্যন্যুভারেই হোক, বা ঐ পূর্বোক্ত প্রশ্নের ডিসআর্মিং সরলতায়, বিপিনের মনে অপূর্ব ভাবের উদয় হইয়াছে। কি অপরূপ তার মুখশ্রী। যেন কৃষ্ণমেঘচ্ছটামুক্ত কেশভারে বহিয়া আনিয়াছে এক অনাগত ভ্যালেন্টাইন সন্ধ্যার গাঢ় অনুকম্পা। কৃশ বাহুলতা যেন এক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গোলাপের উন্মুখ টেন্ডার শাখা। উহার হাস্যে জলপ্রপাতের সঙ্গীত-ধ্বনি। উহার দেহভঙ্গিমায়, চলা ফেরায়, ইথিরিয়্যাল লঘুত্ব।

উহার নয়ন যুগল - পাঠক, তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এই রত্নদ্বয়েই লুক্কায়িত এই আখ্যানের থিম ও বিপিন চন্দ্রের নেমেসিস। কন্যার নেত্রে এ কি বিষণ্ণতার ছায়া। এই বিষাদ-গম্ভীরতার দুর্নিবার আকর্ষণ বিপিন না পারিল এড়াইতে না পারিল সহিতে।


ইত্যবসরে অনামিকা তাহর নাম দিয়াছে- প্রিস্টিন পাল। সুন্দর নাম। এমন নাম শুধু তাহারি হইতে পারে। মশাদের সংগ্রাম নিয়ে আরো অনেক অনেক জ্বালাময়ী সংবাদ উহার শ্রীমুখ হইতে ফল্গুধারার ন্যায় প্রবাহিত হইতেছিল, কিন্ত সহসা সে উপলব্ধি করিল, শ্রোতা একপ্রকার আনমনা হইয়া গিয়াছে। এনোফেলেস সম আনপ্রেডিক্টেবল ক্ষিপ্রতায়, প্রিস্টিন তাহার হস্তে একটি চিমটি কাটিল। বিপিন মুখ তুলিল। ও বিস্ময়ের সাথে অবলোকন করিল, সেই করুণাঘন আঁখিপ্রান্তে, ধিকিধিকি অগ্নিকণা। পাঠক, বিপিনের মত তুমিও ইহার আকস্মিক তাপ অনুভব কর, বক্ষে, মস্তিষ্কে।


-'আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, সি পি এম আমাদের দেশে রাজত্ব চালাইতেছে।'

বিপিন ঢোক গিলিল। এই তিনটি অক্ষর স্মৃতিমন্দিরে এ যাবৎকাল, অসহনীয় অপমানবোধের সমার্থক হইয়া রহিয়া গেছে। একে একে তাহার মনে পড়িতে লগিল, বাড়ির তাকে সযত্নে সাজানো, ক্যাপিটালের চার খন্ড, পার্টি-নিবেদিত-প্রাণ পিতৃদেবের ইলেক্শান ডিউটি, কৈশোরে ভলান্টিয়ার হওয়া, ও সবশেষে প্রাদেশিক কন্ফারেন্সে পোস্টার লেখাকালীন 'কম্যুনিজম' বানানে চারটি 'এম' পড়ায়, এক দল ইন্সেন্সিটিভ ক্যাডার কর্তৃক মুহুর্মুহু পদাঘাত।


প্রিস্টিনের স্বরে পুনরায় অনুকম্পা। 'কি হল, আবার এরকম ম্যলেরিয়া রোগীর মত বিহেভ করছেন কেন?'
বিপিন কিঞ্চিত শিহরিয়া উঠিয়াছিল, কোনরকমে সামলাইয়া নিয়া বলিল 'হ্যাঁ, সি-পি-এম'।
- 'সিপি এম দেশকে আর মশার বাসযোগ্য রাখিবে না। উহাদের পলিসি হইল মশাদের মারিয়া হাতিদের খোরাক দেওয়া। আমরা সিপিএম কে গদিচ্যুত করিব। যবনদিগকে, থুড়ি হার্মাদদিগকে পরাস্ত করিব। অস্ত্রবলে।'
- 'সি পি এম আমার পাছায় লাঠি মারিয়াছিল। এখনো দগদগে ঘা রহিয়াছে। আপনাকে দেখাইতে পারি।'
প্রিস্টিন এর ভ্রু কুঞ্চিত হইল। ও চন্দন সম দেহ হইতে সূক্ষ্ণ রি-রি নির্গত হইল।
- 'তুমি কি নিজেকে মাইকেল ডগলাস ভাব, যে কোন নারী তোমার পশ্চাদ্দেশ দেখিতে উৎসাহিত হইবে?'
- 'আমি আপনাদের সাথে আছি। বেটাদের ওপর আমার অনেক দিনের রাগ।'
- 'তবে এখনো লড়াই-এর সময় আসে নাই। প্রথমে ধন-সংগ্রহ।'
- 'কিন্ত এত ধন লইয়া তুমি কি করিবেক?'
- 'এই একি প্রশ্ন যদি আমার পূর্বজন্মে ভবানী পাঠক না করিয়া থাকিতেন, আমি তোমার বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল ব্যাটারির কেস আনিতাম। ধন বলিতে আমি রিসোর্স মিন করিতেছি। ঐ দূরে দেখা যায় পোটোম্যাক নদী। ওখানে আমাদের বজরা বাঁধা আছে। রবিবার রবিবার যে মশা ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীদের রেস্কু করি, তাদের স্যাংচুয়ারি ঐ বজরা। আর আমাদিগের ওপারেশন বেস-ও বটে । বজরার ডেকে যে যুবক দূরবীন চোখে লইয়া দন্ডায়মান, উহার নাম রঙ্গলাল। রঙ্গলালের নানা ডিউটির মধ্যে একটি হল, দূরবীন লইয়া শত্রুপক্ষের গতিবিধি গোচর করা। আইস, আমরা বজরা অভিমুখে যাই!'





(২)

"And God said unto Noah, The end of all flesh is come before me; for the earth is filled with violence through them; and, behold, I will destroy them with the earth. But with thee will I establish my covenant; and thou shalt come into the ark."
-- The Holy Bible



সেই সন্ধ্যায় বিপিন বজরায় প্রবেশ করিল। প্রিস্টিন ও বিপিনকে আসিতে দেখিয়া রঙ্গলাল দূরবীন এর দিশা ঘুরাইয়া দিল। এতক্ষণ তাহার দৃষ্টি দূরে নদীতীরে ফ্রাইডে-নাইট-হুল্লোর-মত্তা একটি অর্ধনগ্ন শ্বেতাঙ্গিনী জমায়েত-এর প্রতি নিবদ্ধ ছিল। এই ক্ষুদ্র তথ্যের সাহায্যে আমরা রঙ্গলালের চরিত্রের কিছুটা আন্দাজ পাইলাম। আর তথা হইতে বিপ্লবের প্রস্তুতিরও।


প্রিস্টিন ও রঙ্গলাল বিপিন কে বজরা ঘুরাইয়া দেখাইতে লাগিল। বিপিনের মুগ্ধতার সীমা নাই। বিপিন বুঝিল, প্রিস্টিনএর জীবন-দর্শন হইল 'স্মল ইস বিউটিফুল'।


সেই ভাবেই সে তাহার বজরা সাজাইয়াছে। এক একটি ক্ষুদ্র প্রাণির জন্য এক একটি কক্ষ। কি মায়ার সাথে উহাদের লালন করা হইতেছে।


একটি ঘরের সামনে আসিয়া প্রিস্টিন বলিতেছিল ' কি সুন্দর ছোট্ট প্রজাপতিটা , আহা, জোনাকিদের কি বাহার, ঐ দেখুন ঘাস-ফড়িং। এই সুন্দর সবুজ লেজ-ওয়ালা পোকাটির নাম হল...'


পেছনে একটি পুরুষালী কন্ঠ ফুট কাটিল। 'এছাড়াও আছে, গুবড়ে পোকা, কালীপোকা, মাছি, পঁিপড়ে, শুঁয়োপোকা, মাকড়সা, টিকটিকি,...'


বিপিন ঘুরিয়া দেখিল রঙ্গলাল হাসিমুখে আসিয়া দাড়াইয়াছে।
'অসুন্দর বলিয়া ইহাদের তুচ্ছ করিবেন না। ইহারাও সাব-অল্টার্ন।'
কীট-কক্ষের নিওন আলোয় ভয়-বিস্ময়-মিশ্রিতনেত্রে বিপিন খেয়াল করিল, রঙ্গলালের থুতনিতে দুটি পাকা বাল।


সভাকক্ষে আলোচনা চলিতেছিল।
প্রিস্টিন: 'আমি ইহাই বুঝিতে পারিতেছি না, তুমি কিরূপে আমাদের কাজে আসিতে পার। তুমি না জান চালাইতে একে-৪৭ না পাতিতে পারো মাইন। তোমাকে লইয়া আমরা কি করিব?
- 'আজ্ঞে আমি পোস্টমাস্টার'

এক ঝাঁক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি।

- 'আমি অর্কুট নামক এক সাইটে দিবারাত্র পোস্ট করি । ইহাতে আমি বেশ দক্ষ হইয়া উঠিয়াছি। রোবট সমাজবাদের যুগে আন্তর্জালিক যুদ্ধের প্রাসঙ্গিকতা বাড়িবে। তাত্ত্বিক ভাবে শত্রুদের পরাস্ত করিলেই...'


সমগ্র সভাই কেহই বুঝিল না। একমাত্র রঙ্গলাল বুঝিল। বেশ ঝাঁকিয়ে মাথা নাড়িল। রঙ্গলালকে বুঝাইতে বলা হইলে রঙ্গলাল এমন বুঝাইল, যে বাকিদের মনে হইল পূর্বে সবাই বেটার বুঝিয়াছিল। প্রিস্টিন দেখিলেন ইহা তো মহা সমস্যা। তবে রঙ্গলালের একটি কথা সকলে শুনিল ও অনুধাবন করিল।


পোস্টমাস্টারের মত বিদগ্ধ পন্ডিতপ্রবর ব্যক্তিত্ব মহাকালের সংক্ষিপ্ত ইতিহসে দুর্লভ । ওর অনুপস্থিতিতে যেকোন মহাযজ্ঞই অসম্পূর্ণ থাকিবে।





(৩)
"Anything's possible in Human Nature ...Love. Madness. Hope. Infinite joy."
---The God of Small Things


বজরায়া দিন কাটিতে লগিল। বিপিনের কথা কেহ বোঝে না। একমাত্র রঙ্গলাল বোঝে। আসলে নামের ভেতরে এই 'পোস্ট' শব্দটাই রঙ্গলালকে চুম্বকের মত টানিয়াছিল। প্রথম আলাপেই তাই সহাস্যে বলিয়াছিল 'তুমি পোস্টমাস্টার, আর আমি পোস্টমডার্ন।' রঙ্গলালকেও মন্দ লাগে না বিপিনের। সার্থকনামা। গোমড়ামুখো বজরা-বাসীদের মধ্যে একমাত্র ঐ রঙ্গ করিতে জানে।


আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন দুজনেই যৌবনের মধ্যগগনে। এ হেন দুজন যখন রঙ্গ করিবে ইহাই স্বাভাবিক, রঙ্গ-আলোচনার মূল বিষয় হইবে নারী। কিছুদিন তাহাই ছিল, দুজনে দুজনকে প্রেম ও রতি বিষয়ক নানা প্রকারের আউট-ওফ-দ্য-ওয়ার্ল্ড ফান্ডা দিয়া আলোকিত করিল।


কিন্ত ক্রমশ এই লঘু রঙ্গ-তামাশা ও দোস্তির খেলাচ্ছলে, দর্শন হইতে ন্যায়শাস্ত্র হইতে অপ্টিমাল স্তন-সাইজ আলোচনায়, পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যে মিল পাইল, তাহার পরিণাম হইল সাংঘাতিক । একদিকে রঙ্গলালের সুমধুর কন্ঠ, অন্যদিকে বিপিন চন্দ্রের সুঠাম দেহ আর মেধা । দুজনে দুজনের মধ্যে অনন্তকে পাইল। বিপিনের মধ্যে অপূর্বভাবের ঊদয় হইল। পাঠক বলিবে ইহা টেকনিকলি ইন্কারেক্ট। অপূর্ব ভাব দুবার কি করিয়া উদয় হইতে পারে? আমি বলিব, এই অপূর্ব ভাব অপূর্ব কুমার রায়ের ভাব।


শিশু বয়সে ধান-ক্ষেতের মধ্যে ছুটিয়া গিয়া ট্রেন দর্শন, সদ্য প্রাপ্ত গ্লোবের ভিতর কলিকাতাকে চিনিয়া লইবার প্রবল উৎসাহ, বন্ধুর সাথে টহল দিতে দিতে জীবনের ঊদ্দেশ্য হাসিল করিবার তীব্র বাসনা, নব-বধুর চোখে প্রেম দেখিবার সেই অব্যক্ত মিনতি-- এই সমস্ত অভিজ্ঞতার ভিতরে যে পবিত্র ইনোসেন্স প্রচ্ছন্ন, মন-ধাঁধাঁনো নতুন আনন্দ গ্রহণ কালের সেই সজীব সতেজ অনুভূতি, ইহাকেই আমি এখন, ও পরে এই আখ্যানে (আনলেস আদারওয়াইস মেন্শান্ড), অপূর্বভাব বলিব। মূঢ় পাঠক, তুমি ব্রোক্ব্যাক মাঊন্টেন দেখিয়াছ? দেখিলে, দুই প্রেমিকের মিলনকালে ব্যকগ্রাঊন্ডে গীটারের ট্যাঙ্গ-টি মন দিয় শুনিয়াছ? শুনিয়া থকিলে কিছুটা বুঝিতে পারিবে বজরার ডেকে দেখা হইলে দুজনের হৃদয়তন্ত্রী কিরূপ অনন্যসুন্দর হারমনি তে বাজিয়া উঠিত।


সে যাহা হউক, শুক্লা পঞ্চমীর রাতে, রঙ্গলাল প্রস্তাব দিল, দুজনে দুজনার দৈহিক ব্যবধান ঘুচাইয়া দিবে। বিপিন বলিল, ভাবিবে।
ভাবিতে বসিয়া বিপিন পড়িল সংকটে । প্রথম দর্শনেই সে প্রিস্টিনকে হৃদয় দিয়া ফেলিয়াছিল। সেই প্রেম প্রকাশ করিবার আগেই রঙ্গলাল জীবনে আসিল। এখন সে ত্রিকোণ এর একটি ভারটেক্স। যখন সে প্রিস্টিনের কথা ভাবে তাহার রোমাঞ্চ হয়, আশা জাগে, আনন্দ হয়, কিন্ত রঙ্গলালের কথা ভাবিলে এগুলোর সাথে সাথে আর একটি অনুভূতি দানা বাধে- তাহা হইল ভয়। কিছুতেই সে নিজেকে বুঝইতে পারে না, এ সম্পর্ক অস্বাভাবিক নয়। অহর্নিশি এক অসোয়াস্তিবোধ তাহকে বৃশ্চিকের ন্যায় দংশিতে থাকে। জ্ঞানের আলোকেই টুটিবে অন্ধকার- এই আশায় বুক বাধিয়া এক সুপ্রভাতে 'সমকামিতা' কি-ওয়ার্ড দিয়া বিপিন নেট সার্চ করিতে বসিল।





(৪)
"Something touched me deep inside/The day the music died."
--- The American Pie



অন্তর্জালের অপার মহিমা। বিপিন অসংখ্য লিঙ্ক পাইল, যাহার অধিকাংশই গোড়া খ্রীস্টান ওয়েবসাইট হইতে সংগৃহীত । বিপিনের আনন্দ ধরে না। ইহাকেই বোধহয় 'পাইয়াছি, পাইয়াছি', মুহূর্ত বলে। এধার ওধার হইতে এটা ওটা পড়ে বিপিন উপলব্ধি করিল চিন্তাকে মার্শাল করিবার সহজতম পথ হল, এই অগাধ জ্ঞানসমুদ্রে ফার্দার না অবগাহন করিয়া, যাহা মাথায় আসছে, তাহাই লিখিয়া ফেলা। পরম উদ্যমে বিপিন লিখিতে বসিল। আর লেখা না শেষ হইলে সে রঙ্গলাল নিয়ে কোন সঠিক সিদ্ধান্তেও আসিতে পরিবে না। দূত দিয়া বার্তা পাঠাইল যে শুক্লাপঞ্চমীর অ্যাপো সে রাখিতে পারিবে না। রঙ্গলাল দূতের বার্তা পড়িল। শুষ্ক হাসিল । মুখে কিছু কহিল না। চাপা স্বভাব তাহার বরাবরি, তাছাড়া, এর পূর্বে বহু বহু মামণি এইরূপ বার্তা পাঠাইয়াছে, ইহাতে ভাঙ্গিয়া পড়িবার কিছু হয় নাই। কিন্ত মনে মনে অভিশাপ দিল, যে পি-ডি-এফ এর জন্য আমাকে এইরূপ স্নাব করিলে সেই পি-ডি-এফ তোমার কাল হইবে।



(পাঠক এই অভিশাপ লইয়া এখনি কোন কমেন্ট মারিবার সময় হয় নাই। শুধু এটুকু প্রকাশ থাক, এই লেখা ও অভিশাপ এই উপন্যাসের তিনটি অধ্যায়ই ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে নায়ক কে হন্ট করিতে, তখন তাহার নায়িকা অন্য, তখন তাহর ভিন্ন পরিবেশ। তবু পি-ডি-এফ থকিবে।)



লেখার পরে বিপিন বুঝিল, কি ভয়ানক ভ্রান্তির পথে উহার জিনিয়াস ও জীবন বহিয়া যাইতেছিল। সে শুধু প্রিস্টিনকে ভালবসে, শুধু তাহাকেই চায়, শুধু তাহারি জন্য সে আজ তার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাসাদোপম অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়িয়া, বজরায় পোকা-মাকড়দের সাথে দিন কাটাইতেছে। সে তাহাকে প্রেম নিবেদন করিল, প্রত্যাখ্যাত হইল, আবার করিল। আধুনিক কথ্য ভাষায় বলিতে গেলে বিপিন একটি লুপে পড়িয়া গেল। নিরলস ভাবে সে দিনে তিনবার প্রত্যেকটি মিলের পরে এই কাজটি নিষ্ঠার সাথে করে। এতেই সে আনন্দ পায়। তাহার চাওয়ার কিছুই নাই। এদিকে বিপ্লব আসন্ন। এমনি এক সঙ্কটময় সময়ের প্রাক্কালে বিপিন প্রিস্টিনকে তাহার লেখাটি দেখাইল। 'পল্টারজিস্ট' ধর্মী মুভিতে দুষ্ট অশরীরি আত্মা যেমন পোজেজ্ড দেহকে সজোরে ছুড়িয়া মারে, তদরূপ এক অলৌকিক শক্তি প্রিস্টিন কে দু'হাত ছিটকাইয়া দিল।

'এ-এটা, এটা কি লিখেছ তুমি?'
'কেন, ভাল না?'
'আমি তোমাকে একটি কথায় বলিতে পারি, মহাপ্রলয় যদি ত্বরান্বিত করিতে না চাহ এই লেখাটিকে নেট-আলোক দেখাইয়ো না । ইহাতে সবার ঘোর অমঙ্গল'



কথা শেষ হইল না, বজরা আক্রান্ত হইল। রঙ্গলালের তৈরি করা নুনুকামান গুলি কোন কাজে দিল না । পূর্বনির্ধারিত রণকৌশল অনুযায়ী বিপিন সম্মুখে দাড়াইল। ইহাতে লাভ এটাই, উহার মুখাবয়ব দেখমাত্রই শত্রুপক্ষের সমস্ত অস্ত্র উহার দিকেই নিক্ষিপ্ত হইবে। বজরার ক্ষয়ক্ষতি সামান্য হইবে । অস্ত্র বলিতে বিষ্ঠার গোলা, ডিম্ব, লাল কাপড়ে মোড়া শুয়োরের বিচি, ইত্যদি। সিপিএম পরম উৎসাহে বিপিনের দিকে এগুলি ছুঁড়িতে লাগিল।


সহসা বিপিন খেয়াল করিল উহার চারিপাশে কেহ নাই। ও বজরাটি ডুবন্ত। এতদিনের এই নদী-পথের জীবন এক লহমায় মায়া অনুভব হইল।


রঙ্গলাল, মশা, এই বজরা, রঙ্গমঞ্চের ম্যজিকের মত কেমন মিলাইয়া যাইতেছে। প্যাসিফিক এর হিমশীতল সমাধিতে তলিয়া যাইতে যাইতে বিপিন চন্দ্র মানসচক্ষে শুধু একজোড়া বিষণ্ণ চোখ দেখিতে পাইল। শেষে সেটিও মিলাইয়া গেল।


বিষ্ঠার তীব্র গন্ধে বিপিনের জ্ঞান ফিরিল। সবিস্ময়ে সে আবিষ্কার করিল, সে কেবল জীবিতই নহে, জলস্রোতে বহু দূর ভাসিয়া আসিয়াছে। কলেজের সুইমিঙ্গ প্রাক্টিসের সময় সে এক প্রান্তে ডুব দিয়া অন্য প্রান্তে উঠিত । কিন্তু এখন তাহার বডি ক্লক জানান দিল, বেশ খানিকটা কাল অতিবাহিত হইয়াছে। এক বৎসর তো হইবেই হইবে। সারফেসে ভাসিতে ভাসিতে সে একটু চোখ মেলিয়া চাহিল। পারের সমীপবর্তী হইতেই শ্যওলা, কাদা ও জঞ্জালের এক বিস্তীর্ণ লেয়ার-মধ্যে সে নিজেকে পাইল। ইহা প্যাসিফিক নহে , অতলান্তিক হইতে পারে না। অতি পরিচিত পরিবেশ। সুদূরে একটি সেতুর উপরে যানজটের চিত্র । তীরের কাছে সারি দিয়ে বাঁধা কিছু ঘাসফুল-এর সারি । সেই সারির দিকে অপলক দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে বিপিন রিয়ালাইজ করিল কালের রথ তাহাকে ২০১১ র দোরগোড়ায় আনিয়া ফেলিয়াছে।

স্থান : শহর কলিকাতা।


প্রথম খন্ডের সমাপ্তি।

(ক্রমশ..)

Friday, July 10, 2009

ভাট বকা ঃ উবার (über) না উন্মত্ত গাম্বাটপনা


[ ডঃ মারিও মেজরস্কি : ভাট বকার ওপর প্রায় ১০০ টি গবেষনা পত্রে প্রমান করেছেন ভাট একটি মানসিক রোগ]
http://www.scientology.org/
http://en.wikipedia.org/wiki/Mario_Majorski]


সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্স সম্প্রতি সমকামিতা কে তার ভাট-আসরে যুক্ত করেছেন।[1] ক্যালকম থেকে পিআইডাব্লু বি, গাজীব থেকে দিস্তা, সর্বত্র সকলে সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের এই বৈপ্লবিক রায়ে উদ্বেলিত[2] -- ব্যাপারটা দেখে মনে হতেই পারে ভাট বকা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া! এবং এর সম্পূর্ণ সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়া উচিত!


লাগামহীন অযৌক্তিক ভাট স্বাভাবিক/অস্বাভাবিক এইসব শব্দগুলো ভীষণ ভাবে বেমানান। এই নিয়ে থ্রেড ঘাঁটলে পক্ষে হাজারো বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা পাওয়া যাবে[3], কিন্ত তার থেকে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা সম্ভব না। কারণ এরকম দশটা সমীক্ষার বিপরীতে আমি লক্ষটা সমীক্ষার লিঙ্ক দিতে পারি -- যেগুলো সবি সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের অনুগত ভাট ওয়েবসাইট থেকে তোলা।[4][5] রেনেসাঁ-আধুনিকতার উত্তরাধিকার একমাত্রিক লজিকাল কাঠামোর ক্ষুদ্র পরিধিতে যাদের অবস্থান, তারা ভাটের জবাবে বিজ্ঞান আউড়ায়। পোমনাথের মত উত্তর-আধুনিক'রা সে বিচ্যুতি মুক্ত। ওরা বোঝে, তাই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসায় না।


আরেক র্যাডিক্যাল নব্য-কম্যুনিস্ট উদ্দালক গুহ ও র্যাভিশিং লইয়ার, ফেমিনিস্ট, অ্যাক্টিভিস্ট রুমা সেন যথাক্রমে "পিডিএফ ডায়েরিস" ও "আম্মো রামদেব হতে চাই" নামক গ্রন্থে (২০০৯) মত প্রকাশ করেছিলেন, ফিলোসোফারদের অবাধ ভাটের অনুমতি দেওয়া উচিত। কারণ, তাদের ওপর যেসব শারীরিক ও মানসিক ছোবল যথাক্রমে ঘরের স্প্রিং-কোবরা[6] ও অফিসের বস্ মেরে থাকে, তা থেকেই নাকি অরকূটীয় ভার্বাল আমাশা এবং অচরিতার্থ মর্ষকামের জন্ম হয়। উপরন্তু উ.গু. জানাচ্ছেন[11], এই ভাটপ্রেমী ভাটিয়ালের বাল্যকালে এক বিকৃতকামী বৈজ্ঞানিক কর্তৃক তাঁর মগজের ঘিলুর শ্লীলতাহানি হয়। যার ফলে, পরবর্তী জীবনে তাঁর মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে ও এক অভিনব পদ্ধতিতে - নেড়ামুন্ডির ওপর শূন্য বালতি উপুর করে নিয়মিত রব জম্বির[7] মধুর সংগীতের সাথে শ্রোতা ও দর্শকদের বাজানো ডুগডুগি সহযোগে ট্যাঙ্গো নেচে নেচে - আপন মনে বিরাট-িশশু খেলিতে ও ছঁিড়িতে থাকেন। আবার, ২০০৯ সালে আমেরিকান সাইক্রিয়াটিস্ট এসোসিয়েশন জানাচ্ছে মানসিক বিপর্যস্ত বিরাটশিশুদের এইপ্রকার কিম্ভুত নৃত্যগীতাদিতে আকর্ষণ নাকি স্বাভাবিক! আবার এর বিরুদ্ধেও প্রচুর গবেষণা পত্র আছে! এর পরবর্ত্তীতে PIWB সরকার মেম্বারদের কম্যুনিটিতে প্রবেশের ন্যূনতম মানসিক বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ৫ করে! যাতে ফেমিনিস্ট, র্যাশনালিস্ট, পোমো, হোমো ও লিবারালরা মর্ষকামী বিরাটশিশুদের ভাট বকার ওপর ছুরি-কাঁচি চালালে তা খিল্লি বলে গণ্য না হয়!



যাইহোক যে কথাটা আমি বলতে চাইছি -- সেটা হচ্ছে এই -- ভাট বকা স্বাভাবিক তা সাইকোএনালাইসিসের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে বলা যায় না। স্যার কার্ল পপারের বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী সাইকোএনালাইসিস আবার বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্তই না - কারণ ফলসিফিকেশন সম্ভব না অনেক সিদ্ধান্তের। কারণ ওগুলো জন্ম মাত্রই ফলসিফায়ড। যেমন সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্স এর এক্সট্রিম ভাট। মরার ওপর খাড়ার ঘা না দিলেই কি চলে না!



গে এক্টিভিস্টরা গেল গেল রব তোলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের অধিকারী ভদ্রলোক টি কম্যুনিটিতে হিরো হয়ে গেলেন-কারণ তার নিজের দেওয়া লিঙ্ক তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে। একবিংশ শতাব্দীর ডায়ালেক্টিস এক নতুন মাত্রা পাই। টুকলিবাজ লেনিনের বশংবদ মাথামোটা কমিরা প্রশ্ন তুলেছেন, তার বোধশক্তি নিয়ে, বলছেন লিঙ্ক সাম্পলিং ইচ্ছাকৃত ভাবে বায়াস করা, রেজাল্ট ইনকনক্লুসিভ। কিন্ত বিপ্লবের পালে একবার হাওয়া লাগলে তা থামে না। 'টেল অফ টু সিটিস' এর মাদাম দিফার্জের মত তার কন্ঠে শুনতে পাই আমরা - 'Tell wind and fire when to stop, don't tell me'!


সমকামিতা নিয়ে ভাট ভাল কি মন্দ-সেটা নিয়ে মনোবিজ্ঞান কোন বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে আসতে পারে নি-সম্ভবত পারবেও না। কারণ মন কৃষিকাজ জানে না। তাই ভাট-উটপাদন প্রক্রিয়া মনোবিজ্ঞানীদের কাছে অধরা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সব থেকে বড় কথা মনোবিজ্ঞান আদতেই কোন বিজ্ঞান না-তা বিজ্ঞানের পপারিয়ান ফলসিফিকেশন সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। পপার না, ভাট বুঝতে হলে পাপড় দিয়ে বুঝতে হবে। "অন্তরমহল" (rare scene 1)[8] দ্রষ্টব্য।


সুতরাং যখন দাবী করছে সমকামিতা প্রমাণিত ভাবে স্বাভাবিক--অত্যন্ত ভুল তথ্য জানাচ্ছে লোকজনকে। বিজ্ঞান এমন কোন সিদ্ধান্তে আসে নি। আসা সম্ভবও না।


তাহলে সমকামিতার বিয়ে ভাট এর সাথে যুক্ত আইনগুলি কিভাবে তৈরী হবে? কমিউনিটিগুলি কিভাবে ভাট বকার প্রতি আইন তৈরী করবে? এই ক্ষেত্রে GKP - Gross Khilli Product কে প্রাধান্য দিতে হবে। GKP-র অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতের member আকর্ষন। অর্থাৎ এই ধরনের ভাট আগামী দিনের নাগরিকদের ওপর কি প্রভাব ফেলবে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।


সেই দিক দিয়ে দেখলে কি দেখা যাচ্ছে?


[১] মাত্র .০১% [PIWB-র হিসাব ১/৬৯১] সমকামিতা নিয়ে ভাট সমর্থন করে । তথ্য দিয়ে। এবং সেই সমর্থনকারী তথ্য সমূহের ভাট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশী। অথচ প্রতি দিনে গড়ে একটি করে ভাট ধারণ না করলে PIWB নিয়ে পোমনাথের স্বপ্ন পূরণ হয় না। তাহলে সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্সের বাজার দর দাঁড়াচ্ছে ইনফিনিটি! কমিউনিটিতে নিত্যনতুন মামনি আসার জন্যে সমকামিতা নিয়ে ভাট অংশত দায়ী।


[২] ভাট-কামী রা অবাধ ফ্লার্টিং এর অধিকার চাইছে। স্প্রিং-কোবড়া'রা এই সিদ্ধান্ত মেনেই নিয়েছেন। ভাটকামিদের ওপর থ্রেডে-থ্রেডে সার্ভে চালিয়ে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে -সেটা হল এরা দুর্যোধনের মত এপিকাল চরিত্রদের থেকে যুবতীদের সঙ্গী হিসেবে বেশী পছন্দ করেন।

[৩] লোবোটমির সংখ্যাও ভাটবাদী দের মধ্যে বেশী। কারন তারা দ্রুত তাদের ব্রেন বদলায়। অনেকের ধারনায়, এরা ভারতের প্রযুক্তি সংস্থা দ্বারা নির্মিত স্পেশাল রোবট। তাই অর্কুটের অনেক রাজনৈতিক ফোরামেই এদের প্রবেশাধিকার নেই।

[৪] ব্যাক্তিস্বাধীনতার সীমানা কোথায়? সমাজ থেকে আমরা যা পাচ্ছি, তা ফিরিয়ে না দেওয়ার স্বাধীনতা কি আমাদের আছে? ৩০ ফুট শুঁড়ওলা গন্ডার বা প্রবল প্রতাপান্বিত সিংহদেরও নেই।[9] তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে দায় মেটায়। মানবশিশু মায়ের হাত ধরে খলখলিয়ে রেয়ার অফ দ্য রেয়ারেস্ট সিন অবলোকন করে।[10] বিবর্তন এভাবেই লার্ন্ড হয় । কোন সমাজে সেই ব্যাক্তিস্বাধীনতা যদি দেওয়া যায়, যা সামাজিক লজিস্টিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে, অচিরেই সেই সমাজ ধ্বংস হবে। কথাগুলি রাগ-শিশু একদা তার এক বিখ্যাত লম্বা পোস্টে লিখেছিলেন। সমকামিতা নিয়ে এন্তার ভাট বকা শুনে আর বুঝে, তা ছড়িয়ে না দেওয়ার অধিকার - সেই ধরনের একটি অধিকার। অর্থাৎ সুপ্রীম ইন্টেলিজেন্স আমাদের ভাট উপহার দিলেন। এবার আমাদের তাকে সেই ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার পালা -- অর্থাৎ আমাদের সেই ভাট স্পুফ করার কথা -- আমরা করলাম না। এটি সামাজিক অপরাধ না হতে পারে -- কিন্ত সামাজিক ভাবে এই ধরনের ভ্রান্ত ব্যাক্তিস্বাধীনতাকে প্রশ্রয় দিলে ভবিষ্যত ভাটিয়ালির অভাবে সমাজ তথা calcomm ও PIWB সরকারের যুগ্মভাবে প্রদত্ত "ভাটনাগর" পুরস্কারটিই উঠে যাবে।


পরিশেষে ঐরাবত জানাচ্ছেন - "মোদ্দা কথা সমকামিতা নিয়ে কিস্যু না জেনে আর্টিকল লিখে ফেলা মোটেও কোন সুস্থ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি নয়। এ সম্পূর্ণ এক ধরনের দ্বায়িত্বহীন আটভাট বকা যা শুধু শারীরিক বা সামাজিক বা মানসিক রোগের জন্ম দিতে পারে। এটা সুস্থ না অসুস্থ, তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক তর্ক বৃথা। কিন্ত সমাজের আগামী দিনের নাগরিকদের জন্যে এটা একটা ভয়ঙ্কর ট্রেন্ড। যাকে কোনভাবেই সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। এবং কিস্যু না জেনে সমকামিতা নিয়ে এদিক সেদিক থেকে কপি পেস্ট মারা আরেক ধরনের অবুঝ হনুকরন।"

----
সূত্রঃ


[3]For a review, see Utsav, Subhanu, Santanu et al., PIWB, 18 Nov 2008, "The Man who is....... In Retrospective - Biplab Pal" ( http://www.orkut.com/Main#CommMsgs.aspx?cmm=62384129&tid=5269964153985887098&kw=Biplab+pal )